এই মামলায় পলাতক আসামি আইনজীবী পেতে পারেন কি না, তা নিয়ে দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে জমে উঠেছিল শুনানি।
Published : 09 Apr 2023, 06:03 PM
আইনের চোখে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আইনি লড়াই চালাতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে বৃহস্পতিবার।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়েও সেদিন সিদ্ধান্ত দেবেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন সাজার মামলা ছাড়া অন্য মামলায় পলাতকরা কীভাবে আইনজীবী নিয়োগ পান, সে বিষয়ে রোববার বিচারক আছাদুজ্জামানের আদালতে দুই ঘণ্টা ধরে সওয়াল হয়। এরপর বিচারক ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দেন।
যুক্তরাজ্যে থাকা তারেক-জোবায়দার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ হবে কি না, সে বিষয়ে গত ২৯ মার্চ শুনানি হয়েছিল। পরবর্তীকালে অভিযোগ গঠনের জন্য অধিকতর শুনানি ও আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে রোববার তারিখ রেখেছিলেন বিচারক।
২৯ মার্চ পলাতক পলাতক দুই আসামির পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারসহ প্রায় শতাধিক আইনজীবী সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত (ডিএলআর) দেখিয়ে তারেক ও জোবায়দা রহমানের জন্য আইনজীবী নিয়োগের আবেদন করেনছিলেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের ওই আবেদনের বিরোধিতা করে সেদিন শুনানি করেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
এই মামলায় পলাতক আসামি আইনজীবী পেতে পারেন কি না, তা নিয়ে দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে রোববার জমে উঠেছিল শুনানি।
এদিন আইনজীবী মাসুদ তালুকদার মামলার অভিযোগের অসারতার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ৩৫ লাখ টাকা ডা. জোবায়দাকে তার মা দিয়েছেন। এছাড়া অভিযোগে বর্ণিত সব টাকার উৎস প্রদর্শিত হয়েছে। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে সব টাকার উৎস দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “যেসব আসামিরা সাপপ্রেসড, অপপ্রেসড, পুওর, তারা স্টেট ডিফেন্স অর্থাৎ রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী পায় বলে আইনে রয়েছে। তারেক-জোবায়দা তো লন্ডনে রাজকীয় মর্যাদায় রয়েছে। তারা কি পুওর?
“এটা ৩০২ ধারার হত্যা মামলা নয়। দুর্নীতির মামলায় মৃত্যুদণ্ড নেই। মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের মামলায় আসামি পলাতক হলে রাষ্ট্র আইনজীবী দেয়। এ মামলার সাজা মৃত্যুদণ্ড নয়। আপিল বিভাগ এ মামলাটিতে ‘আইনের কাছে যান’ বলেছেন। বলেছেন বিচার শুরু করতে। পলাতক তারেক জোবায়দার জন্য সেখানে আইনজীবী চাওয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগ কোনো নির্দেশনা দেননি। আমরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তা হবে আদালত অবমাননার সামিল।”
দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তারেক ও জোবায়দার আইনজীবী পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন দুদকের আইনজীবী।
তিনি বলেন, “উইদাউট সারেন্ডারে কোনো আইনজীবী পাওয়ার সুযোগ নাই। পলাতক রয়েছেন তারা ইচ্ছা করেই।”
এর জবাবে ব্যবসায়ী হুমায়ুন জহির হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর (বর্তমানে প্রয়াত) আইনি লড়াইয়ের উদাহরণ টানেন আসামি পক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, “তখন বাবুর পক্ষে ছিলেন এই মোশাররফ হোসেন কাজলের সিনিয়র কিংবদন্তি আইনজীবী সিরাজুল হক। এখন সেই যুক্তি ও বক্তব্যের বিরুদ্ধে এই আইনজীবী জেনে-শুনে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।”
আইনজীবী খোরশেদ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪০ ধারা উল্লেখ করে বলেন, “এই ধারা অনুযায়ী সিরাজুল হক ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান বাবুর স্টেট ডিফেন্স হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। আমরাও এই ধারার ব্যাখ্যার প্রতি মাননীয় বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “তাদের আইনের আশ্রয় নিতে কে নিষেধ করেছে? উনি (তারেক রহমান) থাকবেন লন্ডনে রাজকীয় ভবনে; আর বলবেন, তাকে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না! আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন তিনি। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থাকার পরও তারা আইনজীবী নিয়োগের আবেদন করেন। আমরা মনে করি, এটা আদালতের সময় নষ্ট ও আদালত অবমাননার সমান।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
দেড় বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান, তারপর আর দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি; এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। এর মধ্যে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি মামলায় তার সাজাও হয়েছে।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় করা দুদকের মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে।
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষে। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। এরপর নিম্ন আদালতে মামলাটি আবার গতি পায়।
তারেক-জোবাইদার রিট খারিজ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৯ মার্চ