ঘটনার পাঁচ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানায় পুলিশ।
Published : 18 Apr 2025, 08:03 PM
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই যুবক মারা গেছেন।
ঘটনার পাঁচ দিন পর শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান চান্দিনা থানার ওসি মো. জাবেদ উল ইসলাম।
নিহত মো. সবুজ (৩০) উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। দুই সন্তানের জনক সবুজ উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বসবাস থেকে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় সবুজ নিজের শরীরের পেট্রল ঢেলে আগুল লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কের ইউনুছ মিয়ার গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন সেখানে তাদের ইজিবাইক রাখেন। পালাক্রমে তারা তিনজন পাহারাও দেন। ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে গ্যারেজ থেকে দুটি ইজিবাইক চুরি হয়ে যায়।
পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চলতি বছরের ৪ মার্চ তিনজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় মানিক নামে একজনকে ধরে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। পরে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মধ্যস্ততায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় কয়েকজন মাতাব্বর স্থানীয়ভাবে মীমাংসা কথা বলে মানিককে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টো সবুজকে চোর সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজ জানান যে, তিনি ওই রায় মানেন না এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতাও তার নেই।
পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বরের ‘প্ররোচনায়’ এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তার ইজিবাইক নিয়ে যান। এ সময় সুবজকে চুরির অপবাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে সবুজ প্রকাশ্যে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সবুজকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চুরির অপবাদ সইতে না পেরে গায়ে আগুন, দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে
সবুজের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, “গরীবের জন্য আইন নাই, বিচার নাই। তারা (মাতব্বররা) চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করে!
“আমার স্বামী এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে মারা গেছে। আমার স্বামীর ইজিবাইকটিও ফিরিয়ে দেয়নি।”
ওসি জাবেদ উল ইসলাম বলেন, “ইজিবাইক চুরির ঘটনায় মানিক, সাইফুল ও নাজমুলকে আসামি করে থানায় মামলা হয়। তবে ঘটনার সময় আমি এ থানায় ছিলাম না।
“চুরির ঘটনায় সবুজকে দায়ী করে চাপ সৃষ্টি করলে, তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।”
এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি জাবেদ উল ইসলাম।