“মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করেছে।”
Published : 14 Apr 2025, 12:51 PM
কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় এক অটোরিকশা চালক শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে চান্দিনা থানার ওসি জাবেদ উল ইসলাম জানান।
দগ্ধ মো. সবুজ নামের ওই চালককে চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, “আগুনে সুবজের শরীরের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
সবুজ চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
স্থানীয়রা বলছেন, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কের ইউনুছ মিয়ার গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন সেখানে তাদের অটোরিকশা রাখেন। পালাক্রমে তারা তিনজন পাহারাও দেন। প্রায় চার মাস আগে এক রাতে পাহারার দায়িত্ব ছিলেন সবুজ। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে গ্যারেজে তালা দিয়ে সবুজ বাইরে বাথরুমে যান। ওই সময় চোরের দল দুটি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন ওই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মানিক নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। সেদিন রাতেই পুলিশ মানিককে ছেড়ে দেয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বর সবুজকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজ জানান যে, তিনি ওই রায় মানেন না এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতাও তার নেই।
পুলিশ বলছে, সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বরের ‘প্ররোচনায়’ সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তার অটোরিকশা নিয়ে যান। এ সময় সুবজকে চুরির অপবাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সে প্রকাশ্যে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, “মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করেছে। আমার স্বামী চোর আখ্যা দেওয়ার অপবাদ সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গরিবের জন্য আইন নাই, বিচার নাই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।“
ওসি জাবেদ উল ইসলাম বলেন, “অটোরিকশা চুরির ঘটনায় সময় মানিক, সাইফুল ও নাজমুল নামের তিনজনের নাম উল্লেখ করে মানিকের স্ত্রী রহিমা বেগম থানায় একটি মামলা করেন। ওই চুরির ঘটনায় সবুজকে দায়ী করে চাপ সৃষ্টি করলে সে অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জেনেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”