তারেক-জোবাইদার রিট খারিজ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা বিবরণী দেওয়ার’ মামলার বৈধতা প্রশ্নে তিনটি রিট ও রুল খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 09:20 AM
Updated : 26 June 2022, 10:47 AM

সেই সাথে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ মামলার নথিপত্র ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ আদালতে পাঠাতে এবং জজ আদালতে দ্রুত এ এ মামলার নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

এ আদেশের ফলে গত ১৪ বছর ধরে স্থগিত থাকা এ মামলার বিচার কার্যক্রমের পথ খুলেছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

পাশাপাশি তারেক-জোবাইদাকে ‘পলাতক’ বিবেচনা করে, তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী এ মামলা পরিচালনা করতে পারবে না বলে রোববার রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

এর আগে গত ১৯ জুন তারেক ও জোবাইদার তিনটি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য রেখেছিল আদালত। আসামিরা পলাতক কিনা, দুর্নীতি দমন কমিশনের এমন প্রশ্নের বিষয়েও ওই দিন শুনানি হয়।

তারেক-জোবাইদার তিনটি আবেদনই রোববার খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি তাদের পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে।

আদালতে তারেক-জোবাইদার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, “তারেক রহমানের দুটি রিট এবং জোবাইদা রহমানে একটি রিটের রুল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “রায়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে হাই কোর্ট বলেছে- আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ মামলার নথি সিনিয়র মেট্রোপলিট জজের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। সিনিয়র মেট্রোপলিট জজ নথিটি পেলে মামলাটি অতি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।”

দুদকের এ আইনজীবী বলেন, “তারেক রহমান যেহেতু একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলাসহ তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এ বিষয়টি আদালতে আমরা উপস্থাপন করেছি, এই তিনটি মামলার ওপর ভিত্তি করে এবং তার বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে আইনের ‍দৃষ্টিতে তারেক রহমান পলাতক বলে রায় দিয়েছে।”

এর আগে গত ২৯ মে এ মামলায় রুল শুনানিতে 'দণ্ডিত ও পলাতক' থাকা অবস্থায় তারেক রহমান এ মামলার আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন কি না- আদালতে এমন প্রশ্ন রাখেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

ওই দিন আদালত জানায়, পলাতক আসামির পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে কি না, দুদকের এই প্রশ্নের বিষয়ে শুনানি নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে গত ১ জুন জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও হাই কোর্টে জোবাইদাকে ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ দেওয়া হয়েছে পলাতক অবস্থায় তার আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করে।

এরপর গত ৫ জুন এক পলাতক আসামির পক্ষে হাই কোর্টে জামিন চাইতে গেলে পলাতক আসামিদের পক্ষে কোনো আবেদন না করতে আইনজীবীদের নির্দেশ দেয় বিচারপিত মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।

এক যুগের বেশি সময় পর গত এপ্রিলের মাঝামাঝি তারেক-জোবাইদার এ মামলা রুল শুনানির জন্য হাই কোর্টের কার্য তালিকায় আসে। এরপর এ বিষয়ে শুনানির কয়েক দফা সময় নেয় তাদের আইনজীবী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। সেখানে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। পরে একই বছর তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আলাদা রিট আবেদন করেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

আসামিরা তখন মামলা বাতিলের আবেদন করলে হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয়। দীর্ঘ বিরতির পর রিট মামলাগুলো গত ১৯ এপ্রিল আবার শুনানির জন্য আসে।

এ মামলার বৈধতা নিয়ে আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন ডা. জোবাইদা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।

সেই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রুল খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। একই সঙ্গে জোবাইদা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিলেন জোবাইদা রহমান। শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ জোবাইদার আবেদন খারিজ করে দিলে মামলা চালিয়ে নিতে আইনি বাধা কাটে।

গত ১ জুন প্রকাশিত এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতেই বলা হয়, পলাতক জোবাইদার আবেদনে শুনানি করা যাবে না।

নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে সরকার। তারা এখন সেখানেই থাকেন।

বিদেশে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তারেক, তার মা খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তিনিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর মধ্যেই চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন তারেক।

আরও পড়ুন: