এর আগে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতাল পালন করেছিল বিএনপি।
Published : 29 Oct 2023, 01:43 AM
ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখতে পারেনি বিএনপি; পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর পণ্ড হয়ে গেছে তাদের কর্মসূচি। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রায় ৪৫ মাস পর আবার এসেছে দলটির হরতালের ঘোষণা।
ঘটনাবহুল এই শনিবারে দুপুর থেকে বিকালে একের পর এক সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা যখন সমাবেশ শেষ না করে ফিরে গেছেন, তখন পুলিশের ‘অনমুতি ছাড়াই’ ব্যারিকেড পেরিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। বড় রকমের সংঘাত ছাড়া কর্মসূচি শেষ করেছে দলটি।
আর বিরোধীদের পাল্টায় বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমাবেশের পর নির্বিঘ্নে ফিরে গেছেন দলটির নেতাকর্মীরা; বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পথে পা বাড়ানোর খবর আসেনি।
এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন থেকে দুই দলের সমাবেশ ঘিরে জনমনে উদ্বেগের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালেই হরতালের ঘোষণা নতুন শঙ্কা জাগিয়েছে সবার মাঝে।
তবে রোববার হরতালের মধ্যে চলাচলে বাধা দেওয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, “আমরা আপনাদের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দিতে চাই, যেই রাস্তায় অবরোধ করবে, যেই গাড়িতে ভাঙচুর করবে, অগ্নি সংযোগ করবে তার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। কাজেই স্বাভাবিক গতিতে সবাই চলবে এটাই আমরা আশা করি।”
তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের পুলিশ বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে আগামী দিনেও মোকাবেলা করবে।”
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংঘাতের জন্য দুষছেন সরকারকে। রোববারের হরতাল ‘সফল করার’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকাজুড়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “গ্রেপ্তার করে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ পারাপার বন্ধ করে দিয়ে সরকার আমাদের মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। তারা যখন দেখেছে, বাধা উপেক্ষা করে লাখ লাখ লোক মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে, তখন তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করে আমাদের মহাসমাবেশকে পণ্ড করে দিয়েছে।
“ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার সম্পূর্ণ মাস্টার প্ল্যান করে বিএনপির সমাবেশে হামলা করিয়েছে। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
চার ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ, প্রাণহানি
নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা থাকলেও বেলা ১১টার পর উত্তেজনা ছড়ায় কাকরাইল মসজিদের সামনে। ওই পথে বায়তুল মোকাররমের সমাবেশমুখী আওয়ামী লীগের কর্মীদের বহনকারী একটি বাসে ইটপাটকেল ছোঁড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। লাঠিসোটা নিয়েও তেড়ে যেতে দেখা যায় অনেককে।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়; যা পরে ওই এলাকায় একের পর এক সংঘাতের সূত্রপাত ঘটায়। এরপর দুপুর ১টার দিকে সংঘর্ষ কাকরাইল থেকে বিএনপির সমাবেশের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে নিহত হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ; সংঘাতে প্রাণ গেছে যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অনেকেই। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের অন্তত ৪১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, পুলিশের হামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের একের পর এক বিস্ফোরণে কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকা কেঁপে ওঠে। এক পর্যায়ে ধোঁয়ায় চারিদিক ছেয়ে গেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনের মঞ্চে বক্তব্য বন্ধ করে দেন নেতারা।
কর্মীরা মঞ্চে ঘিরে রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের। পরে সমাবেশ পণ্ড হলে ফখরুল রোববার সন্ধ্যা-হরতালের ডাক দিয়ে নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে নিরাপদে সমাবেশস্থল ছেড়ে যান।
‘সহিংসতা শঙ্কা ডেকে আনবে, সমঝোতাকে দূরে ঠেলে দেবে’
দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের আগে পর্যন্ত শনিবারের সমাবেশ ঘিরে সরব ছিল দুই দলই। আগের রাত থেকেই নির্ধারিত স্থানে জমায়েত হতে থাকেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জনমনে কাছাকাছি স্থানে একই দিনে দুই দলের সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগ থাকলেও রাতে সেখানে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
তবে এদিন সকাল থেকে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা প্রায় নাই হয়ে যায়; দুর্ভোগের মুখে পড়েন অফিসগামী রাজধানীবাসী।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকা নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে; একই চিত্র দেখা গেছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটেও।
পুলিশের অনুমতি না পেলেও আরামবাগ এলাকায় সকালেই জমায়েত হন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা; ওই সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশ জমায়েত শান্তিপূর্ণ থাকায় সংঘাতের শঙ্কায় সবার নজর ছিল আরামবাগ-মতিঝিলের দিকে।
তখনও পুলিশ জানায়, অনুমতি ছাড়া জড়ো হওয়ার সুযোগ নেই। ধর্মভিত্তিক দলটির নেতাকর্মীদের সরে যেতে বলা হয়েছে। তবে দুপুরের দিকে ঘিরে রাখা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ শুরু করে জামায়াত।
এরমধ্যেই কাকরাইলের কাছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ; এক পর্যায়ে তা ব্যাপক সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হয়। কাকরাইল এলাকায় সংঘর্ষের রেষ ক্রমান্বয়ে চলে নয়াপল্টনের দিকে।
শনিবার দুপুরে সমাবেশস্থলের কাছে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ ছড়াতে শুরু করলে সমাবেশের কাজ বন্ধ করা হয়। পরে সংঘর্ষ মাত্রা ছড়ালে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
কাকরাইল-বিজয়নগর প্রান্তে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে পৌনে তিনটার দিকে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাকা দেন মির্জা ফখরুল।
এর আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতাল পালন করেছিল বিএনপি।
হরতালেও বাস চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির
কতদিন পর হরতাল?
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ করে। এরপর এই প্রথম হরতালের ডাক দিল তারা।
ওই আন্দোলনের সময় বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার নানা ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এর মধ্যে ২০২২ সালের ২৫ অগাস্ট জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবিতে ঢাকায় আধা বেলা হরতাল পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
‘অনিশ্চিত যাত্রায়’ সমঝোতা
সহিংসতা ও হরতালের দিকে এমন অনিশ্চিত যাত্রাকে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বিশাল অন্তরায়’ বলে মনে করছেন নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সাবেক পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, “সামনে তফসিল, ভোটের আর কয়েক মাস বাকি। আলোচনা ও সমঝোতার কথাই বলছিলাম আমরা। কিন্তু অনড় অবস্থানে এমনটা এজাম্পশন করা হয়েছিল; সহিংসতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
“শনিবার সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হলো, সেটা যে-ই করুক না কেন তা খুবই অনাকাঙ্খিত, বেদনাদায়ক। গণতন্ত্রের জন্য ও নির্বাচনের জন্য এটা বিশাল অন্তরায়।”
সংলাপ ও সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু সমঝোতা যেন সুদূর পরাহত হওয়ার মতো বিষয় এখন। নির্বাচন মানে সমঝোতা। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোথাও কোনো গ্যাপ থাকলে বা কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না তার সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে।
“সহিংসতা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এখন যা হচ্ছে তাতে ভালো নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে সংশয় সৃষ্টি করছে।”
দিনভর যা ঘটল
শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশ এলাকায় নয়া পল্টনে মোবাইলে ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার অভিযোগ করেন ব্যবহারকারীরা।
মোবাইল অপারেটরদেরকে বিটিআরসি ওই এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়; তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তা অস্বীকার করেছে।
দিনে বিএনপির সংঘাতের পর হরতালের আগের রাতে ঢাকায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর এবং আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় সংঘাত-সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যে তারা ভিসা নীতি প্রয়োগ করতে পারে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে।
সংঘর্ষের সময় রাজধানীর বেশ কয়েক জায়গায় বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজধানীর শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুরসহ অন্তত ১৫টি জায়গায় বাসে ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। তাদের টিম পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে।
কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে একদল লোক কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এসময় কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ও আইডিইবি ভবনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সামনে ৬-৭টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাস দুটিতে আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
নৈরাজ্যের হরতাল কেউ মানবে না: কাদের
রণক্ষেত্র কাকরাইল-পল্টন-বিজয়নগর
বিজয়নগর, সেগুন বাগিচা, সিদ্ধেশ্বরী, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল মোড়ের আশপাশ, জাজেজ কোয়ার্টারস, রাজমনি,, আইডিবি ভবন, অডিট ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে, শান্তিনগর, ডিসি রমনা ট্রাফিক অফিসের সামনেসহ মতিঝিল, পুরানা পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের আরও ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। ওই পুলিশ সদস্য দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে শামীম মোল্লা নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাড়িসহ সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। সরকারি স্থাপনায় হামলা ও গাড়িতে আগুনের ঘটনায় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
পুলিশের বিশেষ ইউনিট র্যাবও রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নেওয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে।
সংস্থাটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল সহ বিভিন্ন স্থানে সাধারন মানুষের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ চালিয়েছে। তারা গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সহ সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করেছে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশে যা হল
দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে মিছিলে মিছিলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জড়ো হয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকার পাশাপাশি আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতারা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে আসতে থাকেন। তবে তাদের বহুজনই সমাবেশস্থলের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেননি। গুলিস্তানের সীমানা পেরিয়ে তাদের ভিড় আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ষমতাসীন দলটির সমাবেশ চলাকালে দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে মারামারি এবং লাঠি ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, হরতাল হচ্ছে ‘ভোঁতা অস্ত্র’। বিএনপির ‘এই কর্মসূচি কেউ মানবে না।’
"এদের (বিএনপি) এই নৈরাজ্যের হরতাল কেউ মানবে না। হরতালের এই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে। এই ভোঁতা অস্ত্রে কাজ হবে না।"
রোববার বিএনপি ঘোষিত হরতালের দিন আওয়ামী লীগ সারা দেশে জেলা ও থানা পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে বলেও জানান তিনি।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে এদিন রাজধানীতে বিএনপির ‘মহাসমাবেশকে ঘিরে’ যে সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়, তাতে দলটির ‘আসল চেহারা’ বের হয়ে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই সংঘাতের পুরো দায় বিএনপিকে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, "মির্জা ফখরুল গতকাল আমার আগেই বলেছিলেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। আমি বলেছিলাম, দেখেন তাদের মুখে শান্তি, কাজে কী করে।
“আজকে দেখলেন তো বিএনপি কত নোংরা? সন্ত্রাসী চেহারা, আগুন সন্ত্রাসীর চেহারা। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।”
জামায়াতের সমাবেশে যা হল
পুলিশের অনুমতি না পেলেও শনিবার শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা আগেই দিয়ে রাখে জামায়াতে ইসলামী।
পুলিশের উপস্থিতি ও ঘেরাওয়ের কারণে শাপলা চত্বর এলাকায় দাঁড়াতে না পারলেও আরামবাগে জড়ো হয় জামায়াত-শিবির। সকালের দিকে শাপলা চত্বর এলাকায় তাদের একটি মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যেতে না পারলেও কাছাকাছি আরামবাগ মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে একটি ব্যারিকেড ভাঙলেও তাদের উপর চড়াও হয়নি পুলিশ।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে আরামবাগ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়। একই সময়ে নয়া পল্টনে বিএনপিও সমাবেশ শুরু করে। তবে কাকরাইলের সংঘর্ষের পর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে।
বিকাল ৩টার পর সমাবেশ শেষ করে আরামবাগ এলাকা থেকে চলে যান জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এরপর বিএপির কর্মী-সমর্থকরা ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর করে।
‘অনুমতি ছাড়াই’ সমাবেশ করে গিয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকা এই দল। পরে পৃথকভাবে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে তারা।
রোববার আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ, ‘চলবে বাস’
বিএনপি ঘোষিত হরতালের দিন আওয়ামী লীগ সারা দেশে জেলা ও থানা পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়ে শনিবার ঢাকার শান্তি সমাবেশে তিনি বলেন, "আপনারা সতর্ক থাকবে, পাড়া মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
এদিকে সারা দেশে বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মধ্যে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, "বিএনপি, জামায়াত, শিবিরের ডাকা আগামীকালের হরতালে ঢাকা শহর, শহরতলী ও আন্তঃজেলা রুটে বাস মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকিবে।"