রোববার বিএনপির হরতালের দিন জেলা ও থানা পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা।
Published : 28 Oct 2023, 06:40 PM
হরতালকে ‘ভোঁতা অস্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ‘এই কর্মসূচি কেউ মানবে না।’
পশ্চিমারা বিএনপিক উসকানি দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, সেটি ‘রোববার থেকে আর হবে না।’
রোববার বিএনপি ঘোষিত হরতালের দিন আওয়ামী লীগ সারা দেশে জেলা ও থানা পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে দলীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, "এদের (বিএনপি) এই নৈরাজ্যের হরতাল কেউ মানবে না। হরতালের এই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে। এই ভোঁতা অস্ত্রে কাজ হবে না।"
বিএনপির পাশাপাশি রোববারও রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, "আগামীকাল সারা দেশে থানা, মহানগর, জেলা উপজেলায় আমরা শান্তি সমাবেশ করব।"
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে এদিন রাজধানীতে বিএনপির ‘মহাসমাবেশকে ঘিরে’ যে সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়, তাতে দলটির ‘আসল চেহারা’ বের হয়ে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই দিনটিতে কাছাকাছি এলাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে যে উত্তেজনা ছিল, তা শেষ পর্যন্ত সংঘাতে রূপ নেয়।
অনুমতি ছাড়াই জামায়াত নির্বিঘ্নে সমাবেশ করলেও বিএনপির সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। সমাবেশস্থল নয়া পল্টনের অদূরে কাকরাইলে প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
কয়েক ঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলাসহ অনেক কিছুই ঘটেছে। নির্বিচারে হামলা হয়েছে সংবাদ কর্মীদের ওপরও।
পরে সমাবেশ শেষ না করে বিএনপির নেতারা মঞ্চ থেকে সরে যান। তার আগে রোববার সারা দেশে হরতালের ডাক দেন।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিতে সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে নামা বিএনপি প্রথমে অবরোধ ও পরে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল দিয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন তারা এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।
এর মধ্যে কেবল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতাল করেছিল বিএনপি।
শনিবারের সংঘাতের পুরো দায় বিএনপিকে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, "মির্জা ফখরুল গতকাল আমার আগেই বলেছিলেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। আমি বলেছিলাম, দেখেন তাদের মুখে শান্তি, কাজে কী করে।
“আজকে দেখলেন তো বিএনপি কত নোংরা? সন্ত্রাসী চেহারা, আগুন সন্ত্রাসীর চেহারা। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।”
বিএনপি গত ১৮ অক্টোবর এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ২৮ অক্টোবর থেকেই আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরুর কথা জানিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিন দিন পরে তিনি অবশ্য বলেন, নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে যার যার অবস্থানে ফিরে গিয়ে পরবর্তী কর্মসূচির অপেক্ষায় থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, "বিএনপির মহাযাত্রা ‘মরণযাত্রায়’ রূপ নিয়েছে। কোথায় ফখরুল, কোথায় মির্জা ফখরুল। খেলা হবে...খেলা হবে...।"
নেতা-কর্মীদের ‘প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সামনে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খেলা হবে, তাদের শিক্ষা দিয়ে দিতে হবে। এদের স্বভাব আগের মতই আছে, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তাদের ক্ষমা করা যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আসন্দোলন গড়ে তুলব।"
প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা এবং পুলিশের উপর হামলা নিয়ে তিনি বলেন, "জবাব দিতে হবে, কেন আজকে একজন সজ্জন মানুষ প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা হল, তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে, একজন পুলিশকে হত্যা করল, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।
"এসব বাড়াবাড়ি, অস্ত্রবাজি, বোমাবাজি, নোংরামির জবাব বাংলার মাটিতে অবশ্যই শাস্তি হবে। তাদের অপরাধের বিচার হবে। শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, ক্ষমা নেই।"
পশ্চিমারা বিএনপিকে উসকে দিচ্ছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “কাল থেকে আর পাবেন না। দুপুর পর্যন্ত মরণ কামড়, তারপরে এদিক ওদিক দেখে পালিয়ে গেছে। আমরা থাকব।"
নেতা-কর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়ে কাদের বলেন, "আপনারা সতর্ক থাকবে, পাড়া মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
"আগামীকাল সারা দেশে থানা, মহানগর, জেলা উপজেলায় আমরা শান্তি সমাবেশ করব। আমরা শান্তি চাই, আমরা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে, রক্তপাতের বিরুদ্ধে, নির্বাচনের আগে শান্তি চাই। নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের পরে শান্তি চাই।”
ক্ষমতাসীন দলের এই সমাবেশটি ডাকা হয় এদিন ঢাকায় বিএনপির জমায়েতের ‘জবাব’ হিসেবে। আগের দিন রাত থেকেই নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সভামঞ্চে। সকাল ১০টার পর থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে নানা প্রান্ত থেকে।
ঢাকার পাশাপাশি আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতারা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে আসতে থাকেন। তবে তাদের বহুজনই সমাবেশস্থলের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেননি।
গুলিস্তানের সীমানা পেরিয়ে তাদের ভিড় আশেপাশের এলাকাতেও ছাড়িয়ে পড়ে।
বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এরপর ঢাকা মহানগর কমিটি এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী কমিটির নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখতে থাকেন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলামও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন হাছান মাহমুদ, মাহউব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী।
ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও এতে অংশ নেন।