“গেল সপ্তাহেও পেঁয়াজের কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল। এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।”
Published : 18 Apr 2025, 10:42 PM
রাজধানীতে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে; স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও; আর পুরনো সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ‘নতুন’ দামে।
পেঁয়াজের বাজার চড়া হওয়ার কারণ হিসেবে মৌসুম শেষ হয়ে আসার ‘যুক্তি’ শুনিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, পণ্যটির দাম আরও বাড়তে পারে।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, সাততলা বাজার ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি পেঁয়াজের দাম নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে সাততলা বাজারের ‘রিপা জেনারেল স্টোরের’ স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল সপ্তাহেও পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
“আমরা পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামেই কিনেছি। আর এখন মৌসুম শেষ পেঁয়াজের। এ সময়ে দাম বাড়ে।“
ক্রেতারা অবশ্য এ যুক্তি মানতে নারাজ। সাততলা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরে মোহাম্মদ রিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাম পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে বুঝলাম। তো ওনারা তো প্রতিদিন পেঁয়াজ আনেন না। নিশ্চয় আগের স্টকে থাকা পেঁয়াজ। চাইলেই আরও কয়েকদিন আগের দামে বিক্রি করতে পারত; তা তো করবে না।“
এই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা জেসমিন বেগম বলেন, “আমি সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজ নিলাম ৩৫ টাকা করে। আজ দেখি একটু ভালো মানের হলে ৬০ টাকা; আর অন্যগুলো ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
“জানলে আগে আরও কয়েক কেজি নিয়ে রাখতাম। আমি হোটেল চালাই। পেঁয়াজ লাগে আমার।“
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার রোজা পড়েছিল সবজি, পেঁয়াজ- এগুলোর মৌসুমের মধ্যে। এজন্য সবজি বলেন বা পেঁয়াজ, দাম কম ছিল।
“এখন কৃষকের হাতে পেঁয়াজ নেই। আছে পাইকারদের কাছে; হিমাগারে। তারা এখন রেখে-রেখে দাম বাড়াবে। হয়ত আরও বাড়বে সামনে।“
পুরনো তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে পাঁচ মাসের মাথায় বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন দামের তেলের বোতল এখনও পুরোপুরি বাজারে ঢোকেনি। তবে বিক্রেতারা পুরনো দামের বোতল বিক্রি করছেন নতুন দামে।
প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের নতুন দাম ঠিক হয়েছে ১৮৯ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতল ৮৫২ থেকে হয়েছে ৯২২ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের লিটার ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬৯।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মঙ্গলবার সয়াবিন তেলের নতুন দর ঘোষণা করে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছি।
“এ মুহূর্তে ফরমুলা অনুযায়ী তেলের দাম আছে প্রতি লিটার ১৯৭ টাকা। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাম নির্ধারণ করেছি।”
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “সরকার ভোজ্যতেলে কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এতে মাসে ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল।”
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সবশেষ বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ হয় ১৭৫ টাকা। এরপরও পাঁচ মাসে সয়াবিন তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
উলটো গায়ের দামের তুলনায় বাড়তি দামে তেল বিক্রি, তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য ধরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলেন ক্রেতা-ক্রেতারা।
শুক্রবার বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭৫ টাকা গায়ের মূল্যের তেল বিক্রেতাদের কেউ-কেউ নতুন দামে বিক্রি করছেন।
সাততলা বাজারে তেল কিনতে আসা মো. হাফেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বোতলের তেল আমি কিনেছি ১৯০ টাকা করে গতকাল। সেই তেলের গায়ের মূল্য ১৭৫ টাকা।”
এই বাজারের বিক্রেতা জুয়েল মিঞার ভাষ্য, “দুই-চার দিনের মধ্যেই নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে ঢোকা শুরু করবে। তখন আর দাম নিয়ে ঝামেলা থাকবে না।”
সবজির বাজার আগের মতই
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনও চড়া। বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতিকেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০, বরবটি ৯০, পটল ৭০ থেকে ৮০, ঢেঁড়স ৬০, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা ও কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁকরোলের দাম। সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। এছাড়া সজনে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা ও পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।
বাজারে শীতকালীন কিছু সবজি এখনও মিলছে, তবে দাম চড়া। শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো আকৃতি ও মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় মিলছে চাল কুমড়া।
রোজায় উত্তাপ ছড়ানো লেবুর হালির দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। ধনে পাতার কেজি পড়ছে ১৪০ টাকা। ক্যাপসিকাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
নিকেতন কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা জয়নাল হোসেন বলেন, “গরমকালের (গ্রীষ্মকালীন) সবজির দামটা এখনও একটু বেশি। এটা কমতে একটু টাইম লাগবে। সরবরাহ আরও বাড়লে দাম কমে আসবে আশা করি।”