“যেই রাস্তায় অবরোধ করবে, যেই গাড়িতে ভাঙচুর করবে, অগ্নিসংযোগ করবে তার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব”, বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
Published : 28 Oct 2023, 08:29 PM
বিএনপির মহাসমাবেশের দিন সংঘর্ষের মধ্যে দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় যে পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, তাকে এক ছাত্রদল নেতা কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশ সদস্যকে পেটানোর বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার মধ্যে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে ছবি রয়েছে এক ছাত্রদলের নেতা নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়েছে; শুধু পেটান নাই, তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার মাথাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। এ দৃশ্য সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।”
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত পুলিশ সদস্য ও আহত পুলিশদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এদিন নয়া পল্টনে বিএনপির, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের এবং মতিঝিলে জামায়াতের সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে ছিল টান টান উত্তেজনা, উদ্বেগ-আতঙ্ক।
পুলিশের অনুমতি ছাড়াই আরামবাগ মোড়ে জামায়াতের সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে হলেও বিএনপির সমাবেশের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগর মোড়ে ঘটে যায় তুলকালাম।
কাকরাইলে প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
কয়েক ঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলাসহ অনেক কিছুই ঘটেছে। নির্বিচারে হামলা হয়েছে সংবাদ কর্মীদের ওপরও।
পরে সমাবেশ শেষ না করে বিএনপির নেতারা মঞ্চ থেকে সরে যান। তার আগে রোববার সারা দেশে হরতালের ডাক দেন।
এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর জানা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। প্রকাশ পায়, তার নাম মো. পারভেজ। তিনি দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
এর মধ্যে ফেইসবুকে কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পড়ে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে চার দিক দিয়ে ঘিরে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। আর তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন।
অন্য একটি ভিডিওতে দুই জন পুলিশ সদস্যকে একে একে একইভাবে পেটানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এখানে দেখেছেন এক পুলিশ সদস্য তাকে কীভাবে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তাকে ঢিল ছুড়েছে, সে যখন পড়ে গিয়েছে, তখন তাকে মারা হয়েছে।
“বৃষ্টির মতো তারা ইট পাটকেল ছুড়েছে। তাদের একটা ঘোষণা, পরিকল্পনা ছিল যেটা আমরা শুনতে পেয়েছিলাম তারা একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ২০১৪ যে যেমন করেছিল ঠিক তেমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে৷”
সংঘর্ষের কী কারণ
বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত হয় আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে তারা (বিএনপি) আক্রমণ করে। শুধু আক্রমণ করে ক্ষান্ত হন নাই, তাদের বহনকারী দুটো পিকআপেও তারা হামলা করে।
“তারপর তারা প্রধান বিচারপতি বাড়িতে গেট ভেঙে ডুকে গেল। এই সময় তো পুলিশ আর নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না, পুলিশ তার কাজ করেছে এবং তাদেরকে (বিএনপির কর্মী) ডিসপাচ করে দিয়েছেন।
“তারপর আমরা দেখলাম ক্ষণে ক্ষণে তারা ইট পাটকেল ছুঁড়েছে, বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, ককটেল বিস্ফোরিত করছে। ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউশনে ডুকে সেখানে তিনটা গাড়ি পুড়িয়ে দিল। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের ডিসপাচ করার জন্য যা করণীয় সেটাই করেছে।
“রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, পুলিশের অনেক স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, জাজেস কমপ্লেক্সের ভেতরেও তারা আক্রমণ করেছে।
“আমাদের পুলিশ বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের পুলিশ বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে আগামী দিনেও মোকাবেলা করবে৷”
হরতাল প্রসঙ্গ
রোববার বিএনপির ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “তারা গাড়ি পোড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, বাস পুড়িয়ে দিয়েছে।
“আমরা আপনাদের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দিতে চাই, যেই রাস্তায় অবরোধ করবে, যেই গাড়িতে ভাঙচুর করবে, অগ্নি সংযোগ করবে তার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। কাজেই স্বাভাবিক গতিতে সবাই চলবে এটাই আমরা আশা করি৷”
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে র্যাব
সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করেছে।”
সমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ চালিয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
“তারা গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা প্রধান বিচারপতির বাড়িতে শুধু নয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা ও আক্রমণ চালায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
“তাদের হামলায় আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর বেশ কয়কজন সদস্য হতাহত হন। সেই সঙ্গে তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা করে ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাড়িতেও হামলা করে। তারা দায়িত্বরত গণমাধ্যম কর্মীদের উপরও তারা হামলা চালিয়েছে এবং বিভিন্ন সড়কে স্থাপিত সিসিটিভিও ভাঙচুর করে“, বলে র্যাব।