চল্লিশ বছর আগে জানুয়ারিতে আমার জার্মান ভাষা শেখার স্কুলে প্রথম ক্লাস ছিলো। সেদিন ছিলো জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ।
Published : 30 Nov 2017, 11:30 AM
ওইদিন ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিলো সকাল ৯টায়। তাই আমি পৌনে ৯টার সময় ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের মেইন স্টেশনের বিপরীত দিকে বার্গার কিং-এর উপরে অবস্থিত ভাষা শেখার স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। নির্দেশনা অনুযায়ী আমার ক্লাস রুমটি খুঁজে পেলাম। ঢুকে দেখি মাঝারি আকারের ক্লাস ঘরটিতে কয়েকজন বিদেশি অপেক্ষা করছে।
ঠিক ৯টার সময় ক্লাস ঘরটি ভরে গেল। এই ভাষা কোর্সটি ছিল ২০ জনের, তবে সেদিন এসেছিল ১৪ জন। ঠিক ৯টার সময় শিক্ষক প্রবেশ করলেন। তার চেয়ারে বসে তিনি বললেন, তার নাম গাবি ব্লাস । বয়সে হয়ত ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা বেশি।
ওই সময় মনে হয়েছিলো, দেশ থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে আবার বেশ কয়েক বছর পর এসে বসলাম একেবারেই প্রাইমারি স্কুলে, ধরা যেতে পারে পাঠশালায়। গাবি প্রথমেই জার্মান ভাষায় বললেন, “ইস হাইসে গাবি ব্লাস।” মানে আমার নাম গাবি ব্লাস।
তারপর তিনি বললেন যে এবার তোমরা সবাই ‘ইস হাইসে মুলার’ বলবে। ঠিক অনেকটা আমাদের দেশে পাঠশালার মতো, যেখানে নামতা বা একই বাক্য বার বার উচ্চারণ করানো হয়। এবার শুরু হলো ক্লাসরুমের একটি কোণা থেকে ওই ‘ইস হাইসে মুলার’ বলা।
আমার এভাবে বলা দেখে গাবি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কী জার্মান জানো ?” আমি উত্তর দিলাম, “আইন ভেনিগ” (মানে কিছু কিছু)। গাবি শুনে বেশ খুশি হলো। তারপর সেদিন শেখানো হলো, “ভহেয়ার কমসট দু?” মানে- তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ ? এবার কিন্তু গাবি একই বাক্য সবাইকে উচ্চারণ করতে বললো না, বরং এটা ছিল কে কোন দেশ থেকে এসেছে, সেটা জানার জন্য একটি প্রশ্ন ।
হোসেন, দুই আলী আর মেহরাল জানালো যে তারা তুরস্ক থেকে এসেছে। এলিজাবেথ গ্রিস থেকে, করমতো ও মিলা ভেনিজুয়েলা থেকে, আনা পোল্যান্ড থেকে, মারিয়া স্পেন থেকে, সাইদ ভারত থেকে, টেড আমেরিকা থেকে আর দুটি মেয়ে মরিসাস আর রাশিয়া থেকে এসেছিলো, যাদের নাম আমি স্মরণ করতে পারছি না। আর আমি বাংলাদেশ থেকে তো আছিই।
প্রথম দিনেই আমার কাছে ভাষা শেখার এই ক্লাসে ভাল লেগেছিলো। আমার মন হচ্ছিলো, জার্মানিতে না আসলে তো এই আন্তর্জাতিক পরিবেশে এতোগুলো দেশের ছেলেমেয়েদের সাথে একসাথে ক্লাসে বসে ভাষা শিখতে পারতাম না। আমাদের ওই কোর্সটি দুইভাগে বিভক্ত ছিলো। প্রথম ভাগ সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত, তারপর আধা ঘণ্টা বিরতি। এরপর আবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
চলবে ...
লেখক:
প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও পড়ুন-
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |