জার্মানিতে ৪০ বছর: উৎসবে বাজি পোড়ানোর বিধি

বড়দিনের ছুটির দিনগুলোর পরের দিনগুলোও থাকে শান্ত। দৈনন্দিনের চাঞ্চল্য, কোলাহল, কর্মব্যস্ততায় বেশ ভাটা পড়ে।

শাহ আলম শান্তি, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2017, 05:38 AM
Updated : 4 Oct 2017, 10:39 AM

যারা নিয়মিত কাজ করেন, তাদের অনেকেই এই বড়দিন আর নববর্ষের ছুটির মাঝের দিনগুলো কর্ম বিরতি নিয়ে চলে যান অন্য কোনো দেশ। সেখানে তারা একটু উষ্ণতা আর রোদের আলো পাবেন- এই আশায়।

দীর্ঘ ৪০ বছরেও আমি এর ব্যতিক্রম তেমন একটা দেখিনি। আর ১৯৭৭ সালে এই সময় আমরা নতুন এসে কি-ই বা করবো? শুধু মাঝে মাঝে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বন্ধুরা আসলে একটু ভালো খাওয়া আর ম্যারাথন আড্ডা হতো।

‘ভাইনাখটেন’-এর উৎসব পার হলো। এখন তো এই দীর্ঘ শীতের শুরুতে এদেশের মানুষের আরেকটা অনন্দের কথা ভেবে এই ছোট দিন আর ঠাণ্ডার সময় পার করতে হবে। তাই প্রস্তুতি চলতে থাকে। কে কোথায় কোন পার্টিতে গিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানাবে।

১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এতসব বুঝিনি। শুধু দেখে গেছি, আশেপাশে কী হচ্ছে। পরে জেনেছি, এখানে বছরের শেষ দিনকে বলা হয় ‘সিলভেশটার’ আর উদযাপনকে বলা হয় ‘ফেইর্‌ন’।

এই বর্ষবরণের পুরো জার্মান শব্দ হলো ‘সিলভেশটার ফেইর্‌ন’। তার মানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন। অনুষ্ঠান মানেই এখানে খাবার, পানীয়, নাচ, গান আর হৈ হুল্লোর। তবে বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বাজি পুড়িয়ে নতুন এই বছরকে স্বাগত জানানো।

ব্যাপকভাবে বাজি পোড়ানো হয় এই ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার কিছু সময় আগে থেকে। যদিও সন্ধ্যা থেকে বাজির টুকটাক আওয়াজ পাওয়া যায়। এই বাজির পেছনে খরচ করা হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো। আগের আমলে খরচ করা হত মিলিয়ন মিলিয়ন মার্ক।

কিন্তু আইনের দেশ এই জার্মানি। তাই এই বাজি বিক্রি নিয়েও আছে বিধি-নিষেধ। তার মানে, দোকানগুলোতে ২৯ ডিসেম্বরের আগে বাজি বিক্রি করা নিষেধ। তারপর তো বয়সের প্রতিবন্ধকতা আছেই। ১৮ বছরের নিচে কারও কাছে বাজি বিক্রি হলো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আর এই আইন খুব ভালো মতই এখানে মানা হয়। এখানে একটা সবল রাষ্ট্রের আইন ও তার প্রয়োগ হয়, যে প্রয়োগ আমাদের মত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে অনুপস্থিত।

উৎসব আর আর অবসরের মধ্য দিয়ে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের দিনগুলো কাটছিল। কিন্তু এর মধ্যেই আমার চিন্তা হতো। ভাবতাম, ভিসা আর থাকার সমস্যা তো আপাতত শেষ হয়েছে, জমা টাকা খরচ করে খাচ্ছি, কিন্তু সত্যিকারের জীবন সংগ্রাম তো এখনও শুরু হয় নাই।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজন খুবই অনুভব করেছি তখন। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের মতো আমারও তো কোনো না কোনোভাবে রোজগার করতে হবে। আর দেশে থাকলে যেমন বাবা-মার উপর বসে খাওয়ার একটা সুযোগ থাকে, সেটা তো এই প্রবাসে নেই।

চলবে ...

লেখক: 

প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন-

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!