জার্মানিতে যাওয়ার প্রথম বছরের শেষ দিনটিতে অন্ধকার হওয়ার পর থেকে বাজির আওয়াজ পাচ্ছিলাম। রাত বাড়ছে আর বাড়ছে বাজির শব্দ।
আমরা বাসায় আছি সাতজন। ড্রইং রুমে বসে আমরা বিয়ার পান করছিলাম। আমাদের তখন বাইরের সাথে প্রধান সংযোগ বাড়িওয়ালার দেওয়া সাদা-কালো টেলিভিশন। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই থাকে বর্ষবিদায় আর নববর্ষকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান।
জার্মান প্রোগ্রাম, কি আর বুঝবো? গানের সাথে মিউজিক আর কিছু পরিচিত ইংরেজি গানের সুর বুঝতে পারছিলাম, তারপরও ওই সাদা-কালো টিভি সেটটা আর তা থেকে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজই সে সময় আমাদের আনন্দ দিচ্ছিলো।
রাত সাড়ে ১১টায় বাজি ফাটানোতে মনে হয় আরও অনেকটা গতি পেলো। আমরা বার বার জানালা দিয়ে দেখছিলাম বাইরের অবস্থা। বেশকিছু প্রতিবেশীরা দেখি বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বাজি ফাটাচ্ছেন। এবার আমরা ভাবলাম, ক্রিস্টমাস দেখার মতো আর হতাশ হব না।
আমাদের শীতের কাপড় যা ছিলো, সেগুলো পরে রাস্তায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। ইতোমধ্যে আশেপাশের বাসার তরুণ-তরুণী, বয়স্করা এবং অনেকের সাথে থাকা বাচ্চাদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে ফুটপাতের ধারে বা রাস্তার মাঝে এসে বাজি ফাটাচ্ছেন।
আমরা রাত পৌনে ১২টায় আমাদের বাসার একেবারেই কাছে একটি চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। এই সময়টা হচ্ছে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সর্বচ্চ সময়। তাই আমাদের মতো এ পর্যন্ত যারা বাসায় ছিলেন, তারাও রাস্তায় নেমে এলেন। সাথে তাদের হাতে বাজির প্যাকেট আর শ্যাম্পেন বা বিয়ারের বোতল।
১১টা ৫৫ মিনিট থেকে শুরু হলো কাউন্টডাউন মুহূর্ত। এবার যার যার থলেতে যা কিছু দামী বাজি ছিলো, সেগুলো ফাটানো শুরু হলো। ঠিক যেন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। প্রথমে সাধারণ অস্ত্রের ব্যবহার, তারপর শেষে অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োগ।
ঠিক রাত ১২টায় দেখতে পেলাম, তরুণ-তরুণীরা ‘চিয়ার্স নিউ ইয়ার’ বলে একই শ্যাম্পেন বা বিয়ারের বোতল থেকে পান করছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে। কেউ কেউ পরস্পরকে নিবিড় আলিঙ্গন করে ভালোবেসে চুম্বন করছে। সে এক দারুণ দৃশ্য! বাস্তব জীবনে প্রথম দেখা।
মানুষ যদি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও সংস্কৃতিবান হয়, তাহলে কতো কিছুই প্রকাশ্যে করা যায়। তরুণ অনেক ছেলেমেয়েরা আমাদেরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো আর বিয়ারের বোতলের সাথে টোকা দিয়ে চিয়ার্স জানাচ্ছিলো।
এভাবেই আমারা ইংরেজি নববর্ষ ১৯৭৮ সালকে স্বাগতম জানালাম। পরে শুনেছিলাম, সে বছর নববর্ষ উদযাপনের জন্য জার্মানিতে যে বাজি পোড়ানো হয়েছিলো, তার মূল্য ছিলো দেড়শ’ মিলিয়ন মার্ক বা তারও বেশি!
চলবে ...
লেখক:
প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও পড়ুন-
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |