জার্মানিতে ৪০ বছর: উৎসবের গাছ ‘টানেন বাউম’

জার্মান দেশের খ্রিস্টানরা পবিত্র সন্ধ্যার পর দু’দিন পর্যন্ত উৎসব করেন। সরকারি ছুটিও থাকে। চলে খাবার-দাবার, একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ও প্রচুর পান করা। আর যারা এখনও কিছু ধর্ম মানেন, তারা সকালে চার্চে যান।

শাহ আলম শান্তি, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2017, 05:28 AM
Updated : 25 Sept 2017, 06:12 AM

১৯৭৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তখন থাকতাম ওফেনবাখ শহরে। আর আজ বার্লিনে। এই চার দশকেও ব্যাপারগুলোর মিল দেখা যায়। তখনও ছিল ‘ভাইনাখটের’ দু’দিন আর এখানেও এখন তাই। আরও মিল হলো, ৪০ বছর আগে বড়দিনের সময় ওফেনবাখের রাস্তা যেমন প্রায় খালি দেখতাম, এখানেও অনেকটা তাই।

দীর্ঘ যুদ্ধ-বিগ্রহের পর খ্রিস্টানরা এখন তাদের রক্ষণশীল মনোভাব যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকটাই পরিত্যাগ করেছে। তবে এখনও এই বিশ্বে দুইশ’ কোটি মানুষ এই বড়দিনের উৎসব পালন করেন। এদের বেশিরভাগের কাছে উৎসব হচ্ছে উৎসব-ই।

ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলেন, ডিসেম্বর মাস না হলে এই উৎসব এতোটা জনপ্রিয় হতো না। আগেই বলেছি, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঠাণ্ডা আর দিন সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে মানুষের মন বিষণ্ণ থাকে। তাই যিশুর আগমনকে উপলক্ষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ঘরে-বাইরে প্রায় সব জায়গায় বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এতে সংক্ষিপ্ত দিনের আলোর ঘাটতি একটু পুষিয়ে নেওয়া যায়। এটা ইতিবাচক দিক।

নেতিবাচক দিকও আছে। শুধু এই জার্মান দেশেই প্রতি বছর বড়দিন উপলক্ষে ২৯ মিলিয়ন ‘টানেন বাউম’ গাছ কেনাবেচা হয় (ক্রিসমাস ট্রি)। সেগুলোকে এনে আলো ও সাজানোর জিনিস দিয়ে সাজিয়ে ঘরে রাখা হয় এবং অধিকাংশ সময়ই নতুন বছর পর্যন্ত সেই গাছগুলো ওখানেই থাকে, তারপর সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়।

এখানকার পরিবেশবাদী আর সচেতন জনসাধারণ বলেন, এই উৎসবের নামে ২ কোটি ৯০ লক্ষ গাছের আয়ুকে যে কমিয়ে আনা হয়, সেটা কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত? সাধারণ মানুষরা পৃথিবীর সব দেশেই যার যার পটভূমিতে আসলে সাধারণই থাকে।

জার্মানিতে এসেছি ১৪ অক্টোবর। সেই তখন থেকেই দেখছি যে রাস্তার ধারে আর প্রশস্ত দুই রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গাছের পাতা প্রতিদিনই ঝরে পড়তে পড়তে প্রায় শেষ হয়ে আসছে। সেই গাছগুলোর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আরও করুণ পরিণতি হলো। সব গাছের পাতা ঝরে একেবারে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। নতুন কেউ তখন দেখলে ধারণা করতে পারবে না যে শীতকালটা পার হয়ে গেলে আবার সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত হয়ে যাবে গাছগুলো।

আবহাওয়ার পার্থক্যের কারণে প্রকৃতি তাদেরকে ক্ষমতা দিয়েছে শীত, তুষার ও বরফের সময় অন্যভাবে বাঁচতে। এই যে গাছের পাতা ঝরে একেবারে কঙ্কাল হওয়ার পর আবার সবুজে সজীব হয়ে যাওয়ার সুযোগ আমাদের অঞ্চলে আমার চোখে পড়েনি।

উদ্ভিদ্তত্ত্বে বলা হয়, প্রকৃতিগতভাবেই এখানকার ওইসব গাছগুলোর পাতা ঝরার পর শীতের আগমনী বুঝতে পেরেই তার কাণ্ড  থেকে শুরু করে ডালপালা, এমনকি সরু সরু শিরা-উপশিরা যার যার প্রয়োজনে একটু মোটা হতে শুরু করে। যেন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় গাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রাণ না হারায়। এই মোটা আর শক্ত হওয়াটাই গাছগুলোকে ইউরোপের দীর্ঘ শীত থেকে রক্ষা করে।

এরপর যখন শীত বিদায় নেয়, তখন গাছগুলো বেঁচে থাকার আনন্দ কচি সবুজ পাতায় পাতায় প্রকাশ করে।

চলবে ...

লেখক: 

প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন-

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!