জার্মানিতে ৪০ বছর: গিফট বক্সে লম্বা প্যান্ট!

আমরা জার্মানিতে এসেছি এক মাস পার হয়ে গেছে। এই এক মাসেই যে কতো অভিজ্ঞতা অর্জন হলো, তার হিসেব নেই।

শাহ আলম শান্তি, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2017, 07:37 AM
Updated : 15 July 2017, 07:37 AM

প্রতিদিনই কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন হচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে দেখছি আবহাওয়ার পরিবর্তন সাথে দিনের পরিবর্তনও। ঠাণ্ডা একটু একটু করে বাড়ছে, সাথে দিনের সময়ও কমে আসছে। তার মানে দিন ছোট হয়ে আসছে।

এমনিতে দেশেও আমার শীতের বিকেলটা পছন্দ ছিল না। তারপরও ইউরোপের শীতের সন্ধ্যা, বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের বিকেল দেখে মনে হলো, এই বিকেল যেন দুপুর আর সন্ধ্যার মধ্যে থেকে লড়াই করে নিজের জায়গাটা করার চেষ্টা করছে। তবে খুব একটা যে পারছে, সেটা মনে হলো না।

জার্মানির শীতের আকাশ প্রায় সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকে। কপাল ভালো থাকলে কোনো কোনো সময় মেঘের ফাঁকে সূর্য মামার দর্শন মেলে। আর যদি ভাগ্য খারাপ থাকে, তাহলে অনেক দিনই তার দেখা মেলে না।

জার্মানিতে কথায় আছে,  এই নভেম্বর মাস নাকি ডিপ্রেশনের মাস। আর হবেই বা না কেন? নভেম্বরে তো মাত্র শীতের আগমন, তারপর তো প্রায় এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলবে তার অত্যাচার। তখনও আমি এখনকার মত শীতের একটা অংশ দেশে কাটিয়ে আসতাম।

পরবর্তীতে এদেশের অনেক মানুষ আমাকে বলেছেন, “আপনি তো শীতের সময় দেশে কাটিয়ে আসতে পারেন, তবে আমরা যাব কোথায়?” পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, এই নভেম্বর মাসেই নাকি জার্মানিতে আত্মহত্যার হার বেশি।
আমরা জেনে, তবে না বুঝেই এই শীতের দেশে এসেছি। সুতরাং এখন আর রণে ভঙ্গ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই এখনকার চেষ্টা হবে, এই বৈরি আবহাওয়ার সাথে যথাসম্ভব খাপ খাইয়ে নেওয়ার। কিন্তু শীতের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করবো, তার জন্য কাপড়ের দরকার। সেটাও তো ঠিকমতো নাই।

আমরা বেশি ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য প্যান্টের নিচে পরার মত টাইট, একেবারে পায়ের সাথে লাগানো লম্বা একটু মোটা কাপড়ের প্যান্ট, মাথার উলের টুপি, হাতের গ্লাভস, মাফলার আর পায়ের লম্বা মোজা কিনে নিলাম। তখন আমরা ভাষাহীন বোবাদের মত কেনাকাটা করতাম। সেগুলোর গায়ে লেখা দাম দেখে একটা মোটামুটি হিসেব করে নিতাম। তারপর ক্যাশে তার থেকে বেশি অঙ্কের নোট দিতাম। তাহলে আর এখানে ভাষার ব্যবহারের প্রয়োজন হত না। কারণ ক্যাশে উপস্থিত ব্যক্তি দাম রেখে বাকিটা ফেরত দিয়ে দিতেন।

প্যান্টের নিচে এই লম্বা গেঞ্জি জাতীয় প্যান্ট কিনতে গিয়ে স্কুল জীবনের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। তখন ঢাকার প্রায় সব স্কুলের ছেলেরা রেড ক্রসের টিকেট বিক্রি করতাম, মানে আমাদের হাতে থাকতো একটা বেশ বড় আকারের টিনের গোল বক্স। তার মাঝে টাকা আর মুদ্রা ঢোকানোর মত একটা ছিদ্র আর বক্সের চারদিকে লাগানো থাকতো রেড ক্রসের কাগজ।

আমরা সেই বক্স, রেড ক্রসের টিকেট ও লোকজনের শার্টে লাগানোর জন্য পিন নিয়ে রাস্তায় বের হতাম। আমরা ওই সময় খুব আনন্দের সাথে এই কাজটি করেছি। মনে পড়ে, ওই বয়সেই আমরা সেই বাহদুর শাহ পার্কের কাছে মুসলিম হাই স্কুল থেকে টিকেট লাগাতে লাগাতে বর্তমানের পিজি হাসপাতাল, তখনকার হোটেল শাহবাগ পর্যন্ত চলে যেতাম। কারণ হোটেলের বিদেশি অতিথিরা আমাদের বেশি পয়সা, এমনকি ৫-১০ টাকার নোটও দিতেন।

আমাদের এই টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে আকর্ষণ ছিল যে, আমরা শহর ঘুরতে পারতাম। আর তার থেকে বড় আকর্ষণ ছিল, যারা এই টিকেট বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতো, কয়েক মাস পর তাদের জন্য বিদেশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট খেলনা পাঠাতো। এর নাম ছিল ‘গিফট বক্স’। আমিও কয়েকবার এই বক্স পেয়েছি।

আমাদের স্কুলে যে গিফট বক্সগুলো আসতো, বক্সের গায়ে লেখা দেখেছি যে, ওগুলো আমেরিকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পাঠিয়েছে। বাক্সের ভেতর সব জিনিস চিনতে পারলেও এই ফুল প্যান্টের নিচে পড়ার জন্য লম্বা শীত নিবারণী প্যান্টকে চিনতে পারতাম না। আমরা গবেষণা করেছি, আসলে জিনিসটা কী? কিন্তু বুঝতে পারি নাই। তাই কোনদিন সেটা ব্যবহার করা হয়নি।

আজ জার্মানিতে সেই লম্বা প্যান্টটি দেখেই বুঝতে পারলাম, এই সে আমার ছোটবেলায় দেখা কাপড়, যার ব্যবহার আজ প্রয়োজনের জন্য কিনতে গিয়ে বুঝতে পারলাম।


চলবে ...

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন-

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!