কর্মবিরতিও চালাচ্ছেন শ্রমিকরা
Published : 17 Aug 2022, 03:34 PM
দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনার একদিন বাদে বুধবার বিকালে ঢাকায় এই বৈঠক হতে যাচ্ছে বলে চা শ্রমিক ও বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল ৪টায় শ্রম অধিদপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশীয় চা সংসদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।”
বৈঠকে অংশ নিতে ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলেও জানান পরেশ কালিন্দি।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) সিলেটের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শাহ আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।”
বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে আরও জানানো হবে বলে জানান শিবলী।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শ্রম অধিদপ্তরের শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলামকে ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি।
গত ৯ অগাস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতির পর শনিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি বা ধর্মঘট পালন করেছেন মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিক। রোববার সপ্তাহিক ছুটি ও সোমবার জাতীয় শোক দিবসের জন্য দুদিন কর্মসূচি শিথিল করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। মঙ্গলবার থেকে ফের ধর্মঘটে যায় শ্রমিকরা।
এদিন দুপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন চা শ্রমিকরা। দিনভর আলোচনা হলেও তাতে কোনো ফল আসেনি। বিকালে শ্রমিকরা জানান, তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। বাগানে কাজ বন্ধ থাকবে।
ভরা মৌসুমে টানা ধর্মঘটের কারণে বাগানে চায়ের পাতা না তোলায় কর্তৃপক্ষ ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রীমঙ্গলের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক মহসীন মিয়া মধু।
তিনি বলেন, এভাবে চললে বাগান মালিক ও শ্রমিক উভয়েরই ক্ষতি। ধর্মঘটের কারণে বাগান মালিকদের প্রতিদিন ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও বোনাসসহ ন্যায্যমজুরি নিশ্চিত করবে বাগান মালিক।
মজুরি বাড়ানোর জন্য প্রতি দুই বছর পর পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে উভয়ের আলোচনায় ঐক্যমতের পর চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী, পরবর্তীতে দুই বছর শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অনান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন।
চা শ্রমিকদের সঙ্গে সবশেষ দ্বি-বার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এর পর পরই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশীয় চা সংসদের কাছে ২০ দফা দাবিনামায় ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি দাবি করেন। এ নিয়ে দফায় দফায় এ পর্যন্ত ১৩টি বৈঠকও হয় দুই পক্ষের মধ্যে। কিন্তু দাবির বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন শ্রমিক নেতারা।
শ্রমিক নেতারা জানান, গত ৩ অগাস্ট চা বাগানের মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেটায় কর্ণপাত করেননি।
এর প্রতিবাদে ৯ অগাস্ট থেকে সারাদেশের চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। কর্মবিরতি শেষে তারা কাজে ফিরছিলেন। এরপরও মালিকপক্ষ দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যায়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ২৮ আগস্ট বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব রেখে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকরা এতে সম্মত হননি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের ডিজি শুক্রবার বিকেলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে চা পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে আন্দোলন না করে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার আহ্বান জানান।