মজুরি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান চা শ্রমিকরা

শ্রীমঙ্গলের ইউএনও বলেন, স্মারকলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 03:08 PM
Updated : 14 August 2022, 03:08 PM

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চা শ্রমিকরা।

আন্দোনের অংশ হিসেবে টানা কর্মবিরতি, ধর্মঘটের ধারাবাহিকতায় রোববার বিকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন চা শ্রমিকরা।

এ সময় ইউএনও কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাশ তাপস স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও সংগঠনের বালিশিরা ভ্যালির শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গলের ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শ্রমিকদের স্মারকলিপি পেয়েছি। এবং দ্রুতই তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

প্রতিনিধিদলে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, বালিশিরা ভ্যালির সহসভাপতি সবিতা গোয়ালা, সাধারণ সম্পাদক দেবেন্দ্র বারাইক, সাংগঠনিক সম্পাদক কর্ণ তাঁতী, খেজুরী ছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মহেশ্বর দাস, উপদেষ্টা সুমন কুমার তাঁতী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বলেন, “চা শ্রমিকরা নিরূপায়। যে বেতন দেওয়া হয় তাতে চলে না। একদিন কাজ না করলে সেদিন অভুক্ত থাকতে হয়। এই অবস্থায় নিজের লোকসান স্বীকার করেও ভালো কিছুর জন্য আন্দোলন করছি।”

“দাবি না মানলে আন্দোলন দীর্ঘ হবে। এরই মধ্যে টানা পাঁচদিন আন্দোলন হয়েছে। মালিকপক্ষ সাড়া দেয়নি। শ্রমিকদের প্রতি মালিকপক্ষের দয়ামায়া নেই বললেই চলে।”

বিজয় হাজরা বলেন, “এ অবস্থায় আমরা শ্রমিকরা নিরূপায় হয়েই শেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।”

চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ ও পরেশ কালিন্দির আশা, প্রধানমন্ত্রী এই আবেদন আমলে নিয়ে মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশ দেবেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিক ৯ অগাস্ট থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছিলেন। কর্মবিরতি শেষে দিনের বাকি সময়ে তারা কাজে ফিরেছিলেন।

তবে দাবি না মানলে বাগান ‘অচল’ করে দেওয়ার হুমকি তখনি দিয়েছিলেন শ্রমিক নেতারা। এর মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস পাননি শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যান শ্রমিকরা।

তারা আরও জানান, রোববার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি আর সোমবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির কিছুটা শিথিল থাকবে। এরপর থেকে আবার আন্দোলনে ফিরবেন তারা।

তবে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট শাখার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, সমঝোতা চুক্তির মধ্যে কর্মবিরতি ও আন্দোলনে যাওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। এরই মধ্যে শ্রমিকদের বিষয়গুলো নিয়ে ১৩টি বৈঠক হয়েছে। ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে।

“তাদের বোনাস বৃদ্ধি, গামছা ও টুকরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বর্ধিত মজুরিরও একটি প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। এই শিল্পকে তো টিকিয়ে রাখতে হবে। গত ১০ বছর ধরে চা পাতার মূল্য বাড়েনি। কিন্তু ১০ বছরে চা শ্রমিকদের বেতন কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “দুই টাকা কেজি দরে শ্রমিকদের সপ্তাহে একবার আটা দেওয়া হয়। বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সবকিছুই আমরা দিচ্ছি। এই হিসাব করলে তাদের দৈনিক মজুরি দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা।”