মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা বাগানে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি

দাবি মানা না হলে সব চা বাগান অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 10:07 AM
Updated : 10 August 2022, 10:07 AM

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চা বাগানগুলোতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকরা।

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা।

মৌলভীবাজারে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকালে চা শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের নাচঘরের সামনে মিলিত হন। এ সময় নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক নেতারা। পরে চা বাগানের সেকশনে মিছিল করেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি জানান, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের সব চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। একইভাবে বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতি করা হবে। তবে কিছু চা বাগানে মঙ্গলবার পবিত্র আশুরার বন্ধ থাকায় সেসব চা বাগানে তা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ জানান, মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানসহ সারা দেশের ২৪১টি চা বাগানে তিন দিনের জন্য এ কর্মবিরতি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বিজয় হাজরা জানান, এই কর্মসূচির পর মালিকপক্ষ আলোচনার সময় না দিলে নতুন করে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করাসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত দাবিনামা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি দেওয়া হয়। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানায় তা ১৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

শ্রীমঙ্গল রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চা শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জী জানান, নিয়ম অনুযায়ী চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়তো আরও ১৯ মাস আগেই। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানায় চুক্তির মেয়াদ একটা শেষ হয়ে নতুন করে আরেক চুক্তির সময় চলে এসেছে।

চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক জানান, নির্দিষ্ট সময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেড় বছর আগেই শ্রমিকদের মজুরি বাড়তো। কিন্তু তা না হওয়ায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা শ্রমিকরা কষ্ট করে জীবনাযাপন করছেন।

“মালিকপক্ষ বেতন ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।“

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর পর পর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তির আইন ভঙ্গ করছেন। ১৯ মাস ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না।

তিনি বলেন, তিন দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি রাজপথে এসে দাঁড়াবেন তারা। ডাক দিবেন বৃহৎ আন্দোলনের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্দ শিবলী জানান, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কর্মবিরতি দিলে উৎপাদনে ঘাটতি হবে। তা ছাড়া শ্রমিকরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

তিনি জানান, প্রতি চুক্তিতেই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। এবারও করা হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন চায়ের দাম বাড়েনি এটাও বিবেচনার বিষয়।

আরও পড়ুন:

Also Read: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ২৪১ চা বাগানে চলছে কর্মবিরতি