রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, সংসদ সদস্যের কাছে। তিনি আমাকে একটি ল’ ইয়ার সার্টিফিকেট পাঠিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।”
Published : 04 Mar 2024, 10:43 PM
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মেয়র পদপ্রার্থী মেয়ের জন্য ভোট চাইছেন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এক প্রার্থী।
হাতি প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সংসদ সদস্য বাহারের মেয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা বাস প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়াই করছেন। ভোটে অংশ নেওয়া চার প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তানিম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাকি দুইজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারেন না।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, সংসদ সদস্য বাহারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা তারা পেয়েছেন।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি তানিম লিখিত অভিযোগে বলেন, “আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার বাবা স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ৩ মার্চ (রোববার) নগরীর ইস্টার্ন ইয়াবুক প্লাজা মার্কেটে মতবিনিময় সভার নামে বাস প্রতীকের নির্বাচনি সভা করেছেন। সভা শেষে ওই মার্কেটে বাস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ করেছেন। এই সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংযুক্ত করা হল।
“এ ছাড়া আজ (সোমবার, ৪ মার্চ) নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে বাস মার্কার পক্ষে নির্বাচনি সভা পরিচালনা করেন, যা নির্বাচনি আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি।”
অভিযোগে তানিম এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণবিধি ২০১৬ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার প্রচারকালে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তানিম সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদ সদস্য এরই মধ্যে সংবর্ধনা নেওয়ার নামে অনেকগুলো অনুষ্ঠান করেছেন- সেখানে তিনি প্রকাশ্যে তার মেয়ের জন্য ভোট চেয়েছেন। এগুলো কে বিচার দেবে? নির্বাচন কমিশনেরই তো বিষয়গুলো দেখার কথা। কিন্তু আমরা এসব বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। ভোটারদেরকে কেন্দ্রে যেতে ভয় দেখানো হচ্ছে। যার কারণে ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমরা জানতাম নির্ভয়ে কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের জন্য মাইকিং করবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেটি এখনো করা হয়নি।”
তানিম বলেন, “রোববার আমার হাতি প্রতীকের প্রচারকালে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাস প্রতীকের সমর্থক এবং স্থানীয় কাউন্সিলর নারী কর্মীদের তার কার্যালয়ে আটক করে রাখেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে আমার কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার পোস্টার ছিঁড়ে এবং সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনায় আমি অভিযোগ করেছি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে।”
বিকালে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, “সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম। পরে আমরা বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, সংসদ সদস্যের কাছে। তিনি আমাকে একটি ল’ ইয়ার সার্টিফিকেট পাঠিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি কুমিল্লা সিটির গত সাধারণ নির্বাচনের আগে একটি রিট করেছিলেন উচ্চ আদালতে। তিনি ওই রিটে যে ২২ ধারায় বলা আছে, সংসদ সদস্যরা প্রচার করতে পারবেন না, তিনি ওই ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।”
তিনি বলেন, “২৮ ফেব্রুয়ারি ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (এমপি বাহার) তার পক্ষে একটি আদেশ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ল’ ইয়ার সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকা ওই আদেশ অনুযায়ী সংসদ সদস্যের প্রচার করতে বাধা নেই। তবে আমরা এখনও আদেশের মূলকপি পাইনি। আমি বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি এবং বলেছি, আদেশের কপি সংগ্রহের জন্য। পাশাপাশি এমপি মহোদয়কেও বলেছি আদেশের মূল কপি আমাদের কাছে দিতে।”
“এই অভিযোগ ছাড়া প্রার্থীদের যখনই যেসব অভিযোগ আসছে তখনই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখনো ঘটেনি”, বলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুইজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
তারা হলেন- মনিরুল হক সাক্কু, তাহসিন বাহার সূচনা, নিজাম উদ্দিন কায়সার ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম।
আরও পড়ুন:
সাক্কুর বৈঠকে হাতবোমা বিস্ফোরণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা
কুমিল্লা সিটি ভোট: সাক্কুর উঠান বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচন: কায়সারকে কারণ দর্শানোর নোটিস
‘পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা’ করতে চান কায়সার-তানিম
‘নতুন অধ্যায়’ গড়তে চান সূচনা, আরেকবার সুযোগ চান সাক্কু
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচন: প্রতীক নিয়ে মাঠে চার প্রার্থী
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: সূচনা ছাড়া সবারই অভিযোগ
২০০৮ সালের পর কারা জমি কিনেছেন সেই তালিকা দেখুন: সাক্কুর স্ত্রী