Published : 13 Sep 2022, 11:59 PM
অনেক নাটকীয়তার পর চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করেই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পুলিশের এ তদন্ত সংস্থা বলছে, ‘পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায়’ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার `সোর্সদের দিয়ে’ স্ত্রী মিতুকে ‘খুন করান’ বলে উঠে এসেছে তাদের অনুসন্ধানে।
মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন গত কয়েক বছর ধরে এ কথাই বলে আসছিলেন, যদিও এক সময় জামাতাকে তিনি ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানতেন।
বাবুলের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান লাবু পিবিআইয়ের এই অভিযোগপত্রে সন্তুষ্ট নন। তার ভাষায়, পিবিআই নিজেদের ‘মর্জিমাফিক’ কথা লিখেছে প্রতিবেদনে, তারা এর বিচারিক তদন্ত চান।
হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরের বেশি সময় পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক মঙ্গলবার বিকেলে ২০ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্র জমা দেন চট্টগ্রামের আদালতে।
সেখানে মোট সাতজনকে আসামি করা হলেও প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে। স্ত্রী খুন হওয়ার পর বাবুলই বাদী হয়ে ছয় বছর আগে এ মামলা করেছিলেন।
মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারের মামলায় তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র
মিতু হত্যা: বাবুলের হাতের লেখা ধরে ‘এগুচ্ছে’ পিবিআই
মিতু হত্যা: বাবুলের বিরুদ্ধে শ্বশুরের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন
মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারের করা মামলায় পুনঃতদন্ত হবে
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক।
এর আগে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের আসামি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে আবু নছর গুন্নু, শাহ জামান, সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু, নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলামের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
তাদের মধ্যে নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম সেই হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠাণ্ডাছড়িতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আর সাক্কু এ মামলার আসামি মুছার ভাই।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ওই ঘটনায় চমকে গিয়েছিল পুরো দেশ। প্রশ্ন উঠেছিল, জঙ্গি দমন অভিযানে আলোচিত একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে কারা এভাবে সবার সামনে হত্যা করল।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার। কিন্তু গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার এবং আরও নানা কিছুর পরও তদন্ত বার বার আটকে যায় অন্ধ গলিতে।
কয়েক হাত ঘুরে তদন্তভার পায় পিবিআই। মিতুর পরিবারের নানা কথায় বাবুল আক্তারকে ঘিরে বাড়তে থাকে সন্দেহ। চাপের মধ্যে চাকরি ছাড়তে হয় আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
২০২১ সালের ১২ মে হঠাৎ করেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। বলা হয়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল স্বামী বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের লোক মারফত তিন লাখ ‘টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।
‘পরকীয়ায় জড়িয়ে বাবুল খুন করান’ মিতুকে, মামলায় অভিযোগ বাবার
মামলায় যে অভিযোগ দিলেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর
শ্বশুরের সন্দেহের জবাব দিলেন বাবুল আক্তার
মিতু হত্যা: বাদী বাবুল আক্তার যেভাবে আসামি
নিজের মামলাতেই গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার
এরপর বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। সেদিনই বাবুলসহ ৯ জনকে আসামি করে নতুন হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
সেখানে অভিযোগ করা হয়, ২০১৩ সালে কক্সবাজারে থাকার সময় বিদেশি একজন এনজিও কর্মকর্তার সাথে প্রেম হয় বাবুলের। এ নিয়ে মিতুর সাথে কলহ ছিল। এর জেরেই বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’ মিতুকে হত্যা করা হয়।
আইনি জটিলতার কারণে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ৬ মার্চ সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুলের করা মামলার তদন্ত শেষ করতে বলে আদালত।
বাবুল এখন নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ মামলার কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেসার আদালতে।
হেফাজতে নির্যাতন ও কারাগারে কক্ষ তল্লাশির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ও সোমবার দুটি অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তার। দুটি আবেদনের বিষয়ে ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য আছে।
কী আছে প্রতিবেদনে
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের তদন্ত শেষ হয়েছিল আগেই, কিন্তু অভিযোগপত্র তৈরি করতে সময় লেগেছে।
“মাহমুদা আক্তার মিতু তার স্বামী বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের ঘটনা জেনে ফেলেছিলেন। এ কারণে নিজের সোর্সদের সহায়তায় অর্থের বিনিময়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করান বাবুল আক্তার।”
যার সঙ্গে বাবুলের প্রেমের কথা বলা হচ্ছে, সেই ভারতী নারী একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। আহমেদ রশিদের লেখা ‘তালিবান’ নামে ইংরেজি ভাষার একটি বই তিনি বাবুলকে উপহার দিয়েছিলেন।
ওই বইয়ের তৃতীয় পাতায় সেই নারীর নিজের হাতের লেখায় এবং শেষ পাতার পরের খালি পাতায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখায় ‘প্রথম সাক্ষাতের’ ঘটনাসহ কিছু তথ্য লেখা ছিল।
ওই বইটি মামলার আলামত হিসেবে পুলিশকে দিয়েছিলেন মিতুর বাবা। মিলিয়ে দেখার জন্য বাবুল আক্তারের ইংরেজি হাতের লেখার নমুনাও সংগ্রহ করেছিল পিবিআই।
তদন্ত সংস্থা বলছে, বাবুলের পরকীয়া প্রেমের কথা মিতু জেনে যাওয়ায় সংসারে অশান্তি হচ্ছিল। বিষয়টি বাইরে জানাজানি হলে নিজের ভাবমূর্তির সঙ্কট হতে পারে ভেবে বাবুল তার স্ত্রীকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, মিতু খুন হওয়ার পরপরই সিসিটিভি ভিডিও থেকে খুনিদের ছবি বাবুল আক্তারকে দেখানো হয়। তখন বাবুল তার ঘনিষ্ঠ সোর্স মুছাকে চিনতে না পারার ভান করেন। তাতে পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধে।
ঘটনার পর পুলিশের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ‘জঙ্গিরা মিতুকে হত্যা করেছে কি না’, সে প্রচারও বাবুল চালান বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
মামলার অভিযোগপত্র মঙ্গলবার আদালতে জমা দেয়ার আগে গত অগাস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে তদন্তের সাক্ষ্য স্মারকের সারসংক্ষেপ (এমই) মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে জমা দেয় পিবিআই।
জানতে চাইলে পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগপত্র দাখিলের আগে তদন্তকারী সংস্থা আমাদের মতামত নিয়েছে। অন্য নারীর সাথে সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওয়ায় ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাবুল আক্তার স্ত্রীকে খুন করান বলে অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে।”
বাবুলের করা মামলায় বাবুলকেই আসামি করার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই বলেও জানান পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আজ যে অভিযোগপত্র পিবিআই জমা দিয়েছে, তা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখেছেন। এরপর যাচাই বাছাই ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তিনি মামলার অভিযোগপত্র মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাবেন।”
বাকি আসামি কারা
অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা চট্টগ্রামে বাবুলের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ বলা হলেও মুছার স্ত্রী পান্নার দাবি, ২০১৬ সালের ২২ জুন সকালে বন্দরনগরীর কাঠগড় এলাকার একটি বাসা থেকে তার স্বামীকে ‘পুলিশই’ তুলে নিয়ে যায়।
হত্যাকান্ডের দিন একটি মোটর সাইকেলে করে যাদের পালাতে দেখা যায় সিসিটিভি ভিডিওতে, তাদের অন্যতম মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম। চট্টগ্রামের তখনকার পুলিশ কমিশনার ইকবার বাহার বলেছিলেন, ওয়াসিমই সেদিন মিতুকে গুলি করেন।
ঘটনার সময় হত্যাকারীদের যারা মিতুকে অনুসরণ করছিল, তাদের একজন আনোয়ার হোসেন। পুলিশের দাবি, আরেক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা ছিলেন অস্ত্র সরবরাহকারী।
হত্যাকাণ্ডের আগে ভোলার কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ এবং পরে তা আবার তাকে ফেরত দেওয়ার কথা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেন ওয়াসিম ও আনোয়ার।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল সরবরাহকারী হিসেবে ২০১৬ সালের ১ জুলাই শাহাজান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মুছার সঙ্গী খাইয়ুর ইসলাম কালুও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত। ঘটনার পর থেকেই কালু পলাতক।
বাবুলের পরিবার চায় ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত’
অভিযোগপত্রের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাবুলের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান লাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা মিতু হত্যায় ‘প্রকৃত জড়িতদের’ শাস্তি চান এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি চান।
“পিবিআই যেভাবে নিজেদের মতামত অভিযোগপত্রে দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক। তাই এ ঘটনার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। জুডিশিয়াল এনকোয়ারি হলে বিচারকরা জানতে পারবেন আসলে কী ঘটেছিল এবং কারা জড়িত।”
হাবিবুর রহমান লাবু বলেন, “আমরা ভাই যেহেতু পিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলার আবেদন করেছে, তাই পিবিআই বা পুলিশের কাছে আমরা ন্যায় পাব না। তাই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার্জশিটের কপি, কেস ডকেট এবং ইতোপূর্বে যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, সেসব দেখার জন্য আমরা আইনগত প্রক্রিয়া নেব।
“সেখানে কোনো ইরেগুলারিটিজ বা ভুল আছে কিনা, যাচাই করে এবং আসামির সাথে কথা বলে আমরা আইনগতভাবে বিষয়গুলো ফেইস করব।”
অভিযোগপত্রে বাবুলকে আসামি করায় এবং ‘পরকীয়ার জেরে মিতুকে খুনের’ বিষয়টি আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, “আসলে বাবুল আক্তার কত নৃশংস তা তার ইতিহাস দেখলে জানতে পারবেন। তার লোকজন আছে। তারা সবাই সক্রিয়। দেশে-বিদেশে অনেকেই আছে। ইতোমধ্যে তার পক্ষে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও চালাচ্ছে। তাই আমরা হুমকি অনুভব করছি। আমাদের পরিবারের যে কারো ক্ষতিসাধন তারা করতে পারে।”
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে খুন হন মিতু।
পরদিন ৬ জুন ভোরে চকবাজার বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে।
ওইদিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৬ সালের ৮ জুন ও ১১ জুন গোয়েন্দা পুলিশ হাটহাজারি উপজেলা থেকে আবু নসুর গুন্নু ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার শীতল ঝর্ণা থেকে শাহ জামান ওরফে রবিন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানায়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিতু হত্যায় তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
২০১৬ সালের ২৬ জুন মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুইজনের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৬ সালের ২৮ জুন বাবুল আক্তারের অন্যতম সোর্স এহেতাশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে একটি অস্ত্র মামলা করা হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই মোটর সাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ও শাহজাহান নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৬ সালের ৪ জুলাই মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুছাকে আদালতে হাজির করার দাবি করেন। ২২ জুন বন্দর থানা এলাকায় তাদের এক পরিচিত জনের বাসা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঠান্ডাছড়িতে নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী নামে দুইজন পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
২০১৬ সালের ১৩ অগাস্ট স্ত্রীকে নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের নিরবতা ভাঙ্গেন বাবুল আক্তার।
২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৬ সালের ১ নভেম্বর বেসরকারি আদ-দ্বীন হাসপাতালে সহযোগী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন বাবুল আক্তার।
২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ভোলা ও মনিরকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার বিচার শুরু করে আদালত।
২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রাম যান বাবুল আক্তার।
২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি বাবুলের বাবা-মা ও ২৬ জানুয়ারি শ্বশুর মোশারফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশারফ নীলা চট্টগ্রাম এসে দেখা করেন তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোলার লাল মোহন এলাকা থেকে মিতুর হারানো সিম উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়
২০২১ সালের ১২ মে বাবুল আক্তারের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। তার শ্বশুড় মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর আদালত বাবুলের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে তা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
এ প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের শ্বশুড় মামলার মোশারফ হোসেনের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিল তদন্তসংস্থা।
এবার কারাগারে ‘জীবনের নিরাপত্তা’ চেয়ে বাবুল আক্তারের আবেদন
বাবুল আক্তার ‘অত্যন্ত চতুর’: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পিবিআই প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘হেফাজতে নির্যাতনের’ অভিযোগ বাবুল আক্তারের
বাবুল-মিতুর ছেলে-মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই
‘সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বে’ তদন্ত
পিবিআইয়ের ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে। তাদের পাঁচজন এ মামলার বর্তমান ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা।
২০৮৪ পৃষ্ঠার মূল কেইস ডকেট এবং ২১ ধরনের আলামত জমা দেওয়া হয়েছে মামলার অভিযোগপত্রের সঙ্গে। একটি ব্যাগে করে এসব নথিপত্র আদালতে নিয়ে আসা হয়, সেই ব্যাগের ওপর লাগানো ছিল মিতুর একটি বড় আকারের রঙিন ছবি।
আদালতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসানের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সুপার নাঈমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে ‘সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে’ তারা তদন্ত করেছেন। পিবিআই কোথাও আপস করেনি বা ‘রাগ বিরাগ বা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে’ কিছু করেনি।
“তদন্তে ১ নম্বর আসামি বাবুল আক্তার কীভাবে জড়িত তা আমরা পেয়েছি। আমরা আগে বারবার বলেছি হত্যাকাণ্ড কেন হয়েছে। তদন্ত করে যাকে আসামি পেয়েছি, তাদেরই অভিযুক্ত করেছি।”
এ মামলায় ‘স্বীকারোক্তি’ আদায়ের জন্য পিবিআই হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে আদালতে একটি মামলার আবেদন করেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তাতে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআইর চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মহানগরের এসপি নাঈমা সুলতানাসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাঈমা সুলতানা বলেন, “বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিবেচনাধীন তাই কোনো মন্তব্য করব না।”