মিতু হত্যা: বাদী বাবুল আক্তার যেভাবে আসামি

স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের কান্নার দৃশ্যটি মেকি ভাবার অবকাশ তৈরি হল পাঁচ বছর পর পুলিশেরই তদন্তে।

মিন্টু চৌধুরীও মিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 05:25 PM
Updated : 12 May 2021, 06:37 PM

তখন স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছিলেন বাবুল; সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ই তিনি এখন প্রধান আসামি হয়ে গেলেন রিমান্ডে।

মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার ‘তথ্য প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানিয়ে পিবিআই বুধবার তার মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরপরই তার শ্বশুর নতুন মামলা করেন। তাতে প্রধান আসামি করেন জামাতাকে।

এরপর সেই মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রামের আদালতে তোলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত পাঠায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে খুন হন মিতু। তার ছয় দিন আগে এক ফেইসবুক পোস্টে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় কারও ‘বিরাগভাজন’ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বাবুল।

ওই পোস্ট দেওয়ার দুদিন পর পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় পুলিশ সদরের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন বাবুল। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে সড়কে খুন হন মিতু।  

চট্টগ্রামে ফিরে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নিজেই বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছিলেন পাঁচলাইশ থানায়। স্ত্রী হত্যায় জঙ্গিদের দিকেও ইঙ্গিত করেন জঙ্গিবিরোধী বহু অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বাবুল।

মাহমুদা আক্তার মিতুকে এই সড়কেই হত্যা করা হয়েছিল।

ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। যাদের মধ্যে ছিলেন বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাও। কিন্তু তখন তাকে ‘চিনতেই পারেননি’ বাবুল।

এরপর সেই মাসেই ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বাবুলকে। এরপর নানা নাটকীয়তার পর চাকরি থেকে তার অব্যাহতির আবেদন মঞ্জুর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তারপর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। ঢাকায় বাবুলের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হলেও সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।

গত বছরের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তারপর মুছাকে ঘিরে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে তদন্তকারীরা।

শেষে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল স্বামী বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের লোক মারফত তিন লাখ ‘টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।

সাবেক পুলিশ পরিদর্শকের ছেলে বাবুল বিয়ে করেছিলেন সাবেক আরেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফের মেয়ে মিতুকে।  

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার পদে কাজ শুরু করা বাবুল আক্তার এরপর হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি হন। তারপর কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্ব পান। সবশেষ মিতু হত্যার কয়েকদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে হন পুলিশ সুপার।

মাহমুদা আক্তার মিতু

ও আর নিজাম রোডের একটি ভবনের অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বাবুল।

হত্যাকাণ্ডের পর জানা গিয়েছিল, প্রতিদিন সকালে একজন কনস্টেবল এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেত। এরপর ছোট মেয়েকে নিয়ে বাসার কাছের একটি স্কুলে যেতেন মিতু। কিন্তু ঘটনার দিন সকালে কোনো কনস্টেবল না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছিলেন।  বাসার কাছেই জিইসি মোড়ে তাকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে মোটর সাইকেলে চলে যায় খুনিরা।

ঘটনার দিন ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী এক নারী বলেছিলেন, “উনি (মিতু) বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন। কয়েকদিন আগে একবার বলেছিলেন, ‘এই বাসা সবাই চিনে গেছে, বাসা বদলে ফেলতে হবে’।”

সেদিনই হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে পৌঁছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বাবুল আক্তার। মিতুর মরদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্ত্রী খুন হওয়ার পর স্বজনদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার।

ঘটনার দিন চট্টগ্রামে আসা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও সেদিন মিতু হত্যায় জঙ্গিদের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছিলেন।

খুনের ঘটনা যেখানে ঘটে তার আশেপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার পর সেদিন পুলিশ জানিয়েছিল, মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাত্র ৫০ সেকেন্ডে।

মোটর সাইকেলে থাকা তিন হত্যাকারী মিতুর শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাতের পর মিতুর মাথার বাঁ দিকে গুলি করেছিল।

প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা বলেছিল, ২০১৬ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া জঙ্গি হামলার ঘটনার সাথে মিতু হত্যার ‘মিল আছে’।

২০১৬ সালের ৫ জুন থেকে ৮ জুনের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও খুনের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা মেলেনি।

এর পরের কয়েকদিনে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা আরও চার-পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

এরপর ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, “কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

ওই জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুলকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করা হয় বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

দুই দিন পর ওই বছরের ২৬ জুন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সেসময়ের কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে মিতু হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত’ মোতালেব মিয়া ওয়াসিম এবং আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের খবর দেন।

ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

জবানবন্দিতে ওয়াসিম বলেন, নবী, কালু, মুছা ও তিনি ‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন’ এবং নবী ও কালু মিতুকে ‘ছুরিকাঘাত করে’। আর শাহাজাহান ঘটনাস্থলের অদূরে একটি হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিমের জবানবন্দি আসে মুছার কথা।

এরপর ১ জুলাই মুছার ভাই সাইফুল ইসলাম শিকদার সাকু ও শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৪ জুলাই মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ২২ জুন নগরীর বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ মুছাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর আর তার খোঁজ মেলেনি। যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করে।

২০১৬ সালের ২৮ জুন পুলিশ বাকলিয়া এলাকা থেকে ‘হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী’ ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা পিস্তলটি মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হয় বলে তখন পুলিশ দাবি করেছিল।

এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দেওয়ার পাশাপাশি ভোলাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান ভোলা।

মিতু হত্যার পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত বাবুল ২০১৬ সালের ১৩ অগাস্ট ফেইসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিলেন, “অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত… আমি তো বর্ম পরে নেই…আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।”

পরদিন ১৪ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। ৬ সেপ্টেম্বর তা গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে বাবুলকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেন তার শ্বশুর মোশাররফ।

তখন তিনি বলেন, “এখন যেসব শুনছি, তার কিছুটাও যদি সত্য হয় তাহলে তো বুঝব, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বাবুল আমার বাসায় থেকে অভিনয় করেছে।”

মোশাররফ তখন বলেছিলেন, “এখন যা শুনছি, এমন অভিযোগ বাবুলের বিরুদ্ধে আজীবন ছিল। শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা মাহমুদাকে (মিতু) অত্যাচার করত। ঘটনার ১৫ দিন আগেও বাবুল আক্তারের বাসায় একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এখন তো ঢাকায়, নোয়াখালী, বিদেশেও তার পরকীয়ার কথা শুনি।”

আগের তদন্ত সংস্থার কাছে বাবুলের ‘পরকীয়া’র কথা জানিয়েছিলে বলেও দাবি করেন মোশাররফ।

তার প্রতিক্রিয়ায় বাবুল আক্তার এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’। তাতে বাবুল অভিযোগ করেন, তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মিতুর স্কুলপড়ুয়া এক খালাত বোনের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে রাজি না হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসায় তার উপর ক্ষিপ্ত হন তারা।

‘অর্থ দিয়ে খুন করান’ বাবুল

২০২০ এর জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। 

পিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে মামলাটির সেসময়ের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআইর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত সুপার মো. মাঈন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুটি প্রশ্ন সামনে রেখে তাদের তদন্ত চলছে।

প্রথম প্রশ্নটি হলো- কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা কেন প্রধান পরিকল্পনাকারী হল? এখানে তার স্বার্থ কী? এ ঘটনায় কারও ইন্ধন আছে কি না? মুছার নেপথ্যে কে?

আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো- বাবুল আক্তারের শ্বশুর শুরুতে মেয়ে জামাইকে ‘মহান’ বললেও এখন তাকেই কেন অভিযুক্ত করছেন?

এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামে ডেকে নিয়েছে পিবিআই। রাতেই তাকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়ালে পিবিআই বাবুলকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায়।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, মিতু হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালে বাবুল আক্তারের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে পিবিআই।

কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা।

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “হত্যকাণ্ডের পর সিসি টিভি ফুটেজে মুছাকে দেখা গিয়েছিল। মুছা তার সোর্স। কিন্তু তখন মুছাকে চেনার কথা জানাননি বাবুল আক্তার। তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চেনেননি বাবুল। তাকে কেন আইডেন্টিফাই করেনি?”

তিনি বলেন, “স্ত্রীর মৃত্যুর পর বাবুল আক্তারের যে আচরণ, তা প্রিয়জন হারানোর পর যেরকম তাই ছিল। সেজন্য সবাই বিশ্বাস করেছিল।”

বাবুলকে আদালতে নেওয়ার পর পিবিআই কর্মকর্তা নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “যে কিলিংটা হয়েছিল, সেখানে একটা ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রাক্ট (আর্থিক চুক্তি) ছিল। সেই কন্ট্রাক্টের বিষয়টি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বের করি। যে মানি ফ্লোটি হয়েছিল সেটি এনালাইসিস করি।

“এরপর আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, এই ঘটনায় বাবুল আক্তার মূল পরিকল্পনাকারী এবং তার সাথে অন্যান্য নয়জন সহযোগী ছিল।”

নাজমুল বলেন, “সাইফুল হক হলেন বাবুল আক্তারের পূর্ব পরিচিত ও এক সময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার। আর কাজী আল মামুন হলেন খুনের যে মূল নেতা পলাতক মুছা, সেই মুছার আত্মীয়। বাবুল আক্তার তার ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুলের মাধ্যমে টাকাটা মুছার আত্মীয় কাজী আল মামুনের নিকট বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। কাজী আল মামুন সেই টাকাটা মুছা ও মুছার স্ত্রীর কাছে প্রেরণ করে।

“কয়েক দফায় তারা মোট তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছে। সাইফুল হক ও কাজী আল মামুন জবানবন্দিতে এটা বলেছে। যে বিকাশ একাউন্ট, সেটার এস্টেটমেন্ট এনেছি। হত্যাকাণ্ডের পরবর্তীতে তাদের কমিটমেন্ট অনুসারে এই টাকাটা প্রেরণ করা হয়েছে।”

হত্যার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বাবুলকে চিহ্নিত করলেও কী কারণে স্ত্রীকে হত্যা করেছেন, তা এখনও জানা যায়নি।

পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

পিবিআই আগের মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বুধবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হাজির হন নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে নতুন হত্যা মামলা করেন তিনি। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, বিদেশি সংস্থার হয়ে কক্সবাজারের কর্মরত ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে ‘পরকীয়ার’ জেরে বাবুল আক্তারের পরিকল্পনাতে মিতুকে হত্যা করে অন্য আসামিরা।

বাবুল ছাড়া আসামিরা হলেন- মুছা, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।

কেন এই হত্যা- জানতে চাইলে পিবিআই কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। মোটিভ অব ক্রাইম যেটা, সেটা আরও বিস্তারিত তদন্ত করা প্রয়োজন রয়েছে।”

বিদেশি নারীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তার সাথে তার (বাবুল) এক সময়ের একটা সম্পর্ক ছিল। সেটার ডকুমেন্টস আমরা পেয়েছি। সেটা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।”

স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু।

পারিবারিক কলহ থেকে কি না- জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, “মোটিভটা বিস্তারিত পরে জানানো যাবে। পারিবারিক কলহ একটা ছিল। সন্দেহের অবকাশ আছে যে দুজনের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। একটা পর্যায়ে তা চরম আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু হত্যাকান্ডে সেটার পাশাপাশি আরও অন্য কিছু আছে কিনা তা তদন্তের পরে দেখতে পাব।”

বাবুল আক্তারকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন হেফাজতে রাখার আবেদন করে পিবিআই। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়েছে।