বাবুল-মিতুর ছেলে-মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই

মাহমুদা আক্তার মিতু ও বাবুল আক্তারের ছেলে-মেয়েকে মাগুরায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমাগুরা প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 11:16 AM
Updated : 4 July 2022, 02:02 PM

শিশু দুটির মা মিতু সাত বছর আগে চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাদের বাবা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল সেই খুনের আসামি হয়ে এখন কারাগারে।

এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পিবিআই বেশ কিছু দিন ধরে শিশু দুটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছিল। কিন্তু বাবুলের পরিবারের কাছে থাকা শিশু দুটিকে পাচ্ছিল না।

নানা ঘটনার পর সোমবার মাগুরায় গিয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ডেকে এনে শিশু দুটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম পিবিআইর পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।

বর্তমানে ১২ ও ৭ বছর বয়সী শিশু দুটিকে সেখানে নিয়ে যান বাবুলের বাবা পুলিশের সাবেক উপ-পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ। তাদের সঙ্গে পরিবারের আরও কয়েকজন নারী সদস্যও ছিলেন।

টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, “মহামান্য হাই কোটের নির্দেশে জেলা সমাজসেবা অফিসারের কক্ষে শিশু দুটির দাদা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়ার উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, প্রবেশন অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

“হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতে সুন্দর পরিবেশে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন হয়েছে।”

মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ছেলে-মেয়েদের কাছে কোনো তথ্য মিলেছে কি না- জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় ছেলেটি ‘টেকনিক্যাল’ উত্তর দিয়েছে। বাবুল আক্তারের বিপক্ষে যায়, এমন কিছু জিজ্ঞাসা করলেই সে ‘স্মরণ নেই’, ‘জানি না’ এ ধরনের কথা বলে এড়িয়ে গেছে। ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে দাদার বাড়িতে অবস্থান করছে। যার কারণে তাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”

মেয়েটিকে ‘তেমন কিছু’ জিজ্ঞাসা করা হয়নি বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা আবু জাফর।

মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। এখানেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শিশু দুটিকে।

বাবুল আক্তারের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান লাবু অভিযোগ করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা হাই কোর্টের আদেশ ভঙ্গ করে সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বাইরে গিয়ে ফোনে কথা বলেছেন। এছাড়া তিনি অতিরিক্ত লোক প্রবেশ করিয়েছেন।

তবে তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি হাই কোর্টের নিদের্শনা মেনেই জিজ্ঞাসাবাদে সহায়তা করেছেন।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন শিশু দুটির দাদা ওয়াদুদ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ছোট বাচ্চাদের টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা অমানবিক।”

ছেলে বাবুল আক্তারের পক্ষ নিয়ে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমার ছেলে একজন সৎ, বলিষ্ঠ ও ন্যায়নিষ্ঠ পুলিশ অফিসার ছিল। পাঁচবার পিপিএম পদক পেয়েছে। তাকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”

তিনি মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামি মুছাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, “সে গ্রেপ্তার হলেই মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হবে।”

বাবুল যখন চট্টগ্রাম পুলিশে কর্মরত ছিলেন, তখন তার সোর্স ছিলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা। পুলিশ বলছে, মুছা নিরুদ্দেশ; তবে তার পরিবারের অভিযোগ, মিতু খুন হওয়ার কয়েক মাস পর পুলিশ পরিচয়ে মুছাকে ধরে নেওয়ার পর আর তার সন্ধান মেলেনি।

স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে মাহমুদা খানম মিতু; ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম শহরে হত্যা করা হয়েছিল তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুলের স্ত্রীকে। এখন বাবুলই আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

এসপি বাবুল পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা যাওয়ার পরপরই ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয় তার স্ত্রী মিতুকে। মিতুর সঙ্গে তখন তার বড় সন্তানটি ছিল। ছেলেটির বয়স তখন সাত বছর।

দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই খুনের পর বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে হত্যা মামলা করেন।

তার কয়েকমাস পর বাবুলকে ঢাকায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর নাটকীয় পরিস্থিতিতে পুলিশের চাকরি ছাড়েন বাবুল। ঢাকায় শুরুতে শ্বশুরের বাড়িতে থাকলেও পরে সন্তানদের নিয়ে আলাদা বাসায় থাকা শুরু করেন। পরে বিয়েও করেন।

এরপর পিবিআই মামলাটির তদন্তে আসার পর তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। গত বছর পিবিআই জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী স্বয়ং বাবুল আক্তার। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় বাবুল স্ত্রীকে হত্যা করান বলেও ইঙ্গিত করে পিবিআই।

এরপর মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন আরেকটি হত্যামামলা করেন। তাতে আসামি করা হয় বাবুলসহ নয়জনকে। সেই মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয় কারাগারে।

তবে আইনি জটিলতায় এখন বাবুলের করা মামলাটিই এখন কার্যকর রয়েছে। আর সেই মামলা বাদী বাবুল এখন আসামি হয়ে কারাগারে।