‘পরকীয়ায় জড়িয়ে বাবুল খুন করান’ মিতুকে, মামলায় অভিযোগ বাবার

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে আসামি করে নতুন মামলা দায়ের করেছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 10:39 AM
Updated : 12 May 2021, 12:21 PM

বুধবার দুপুরে তিনি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আট জনের নামে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাবুল এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে ‘পরকীয়ায়’ জড়িয়ে পড়ায় মিতুর সাথে তার কলহ চলছিল।

এর জেরেই বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’ ২০১৬ সালের ৫ জুন প্রকাশ্যে রাস্তায় মিতুকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

অপর আসামিরা হলেন- বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।

বেলা সোয়া ১২টায় পাঁচলাইশ থানায় আসেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে তিনি ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, “আগের যে মামলা তাতে পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আগের মামলার তদন্তে পুলিশ বাবুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে পিবিআই।

“বাবুল এখানে পরিকল্পনাকারী। অন্য যারা আসামি তারা আগের মামলায় তদন্তে এসেছিল। তাদের সাথে সম্পৃক্ততায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”

এসপি বাবুল আক্তার (ফাইল ছবি)

নতুন করে কেন মামলা করতে হল, সেই ব্যাখ্যায় মিতুর বাবা বলেন, “বাবুল যেহেতু আগের মামলার বাদী ছিল, আমি না করলে পুলিশ সুয়োমটো করে মামলা করত। তারা করেনি, আমি করেছি। গত তিন বছর ধরে তার (বাবুল) সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।”

মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাবুল ২০১৩ সালে কক্সবাজারে ছিল। সেখানে একজন এনজিও কর্মকর্তার সাথে তার পরকীয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। এ বিষয়টি আমি মামলায় উল্লেখ করেছি।”

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, “আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পিবিআই থেকে মামলার রিকুইজিশেন চলে এসেছে। আইনগত প্রক্রিয়ায় মামলাটি তাদের হস্তান্তর করব।”

মিতুর বাবা যখন থানায় মামলা করছিলেন, পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা তখন চট্টগ্রামের আদালতে যান ২০১৬ সালে বাবুল আক্তারের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় ৫৭৫ পৃষ্ঠার ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেবেন তারা।

বাবুল আক্তার মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন জিজ্ঞাসাবাদেরে মুখোমুখি হওয়ার জন্য। এর পর থেকে তিনি পিবিআই হেফাজতেই আছেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিতু হত্যার সাথে বাবুল আক্তারের ‘জড়িত থাকার প্রমাণ’ পেয়েছে পিবিআই। সে কারণে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। মিতুর বাবা মামলা করলে তাতে বাবুলকে আদালতে হাজির করা হবে।

বাবুল আক্তার এক সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।

মাহমুদা আক্তার মিতু

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন তার স্ত্রী মিতু।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে বাবুল আক্তার নিজেই মামলা করেছিলেন।

শুরুতে মেয়েজামাইয়ের পক্ষে বললেও কিছুদিন পর অবস্থান বদলান বাবুল আক্তারের শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।

তিনি অভিযোগ তোলেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে তার সন্দেহ।

পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে বাবুল আক্তার নানা গুঞ্জনে নীরব থাকলেও শ্বশুরের সন্দেহ প্রকাশের পর এক ফেইসবুক পোস্টে জবাব দিয়েছিলেন।

‘সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’ শিরোনামে দুই হাজারের বেশি শব্দের ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি তার নিহত স্ত্রী মিতুর স্কুলপড়ুয়া এক খালাত বোনের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে রাজি না হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসায় তার উপর ক্ষিপ্ত হন তারা।

“এতে তারা ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণও হয়েছিলেন। বলেছিলেন, এর পরিণাম হবে খারাপ এবং আমাকে পচিয়ে ছাড়বেন তারা,” লিখেছিলেন বাবুল।

তদন্তের বিষয়ে দক্ষ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও লিখেছিলেন, “বাস্তব জীবনটা কোনো চলচ্চিত্র না। আমি সুপারকপের মতো উঠে গিয়ে স্ত্রীর খুনি বের করে ফেলব?”