মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারের মামলায় তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র

অনেক নাটকীয়তার পর বাবুল আক্তারকেই তার স্ত্রী হত্যার জন্য দায়ী করে অভিযোগপত্র দিল পিবিআই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2022, 10:07 AM
Updated : 13 Sept 2022, 10:07 AM

চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ছয় বছর আগে যে মামলা করেছিলেন, তাতে তাকেই প্রধান আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সুপার নাঈমা সুলতানার নেতৃত্বে তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুকসহ এ সংস্থার একটি দল মঙ্গলবার আদালতে গিয়ে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। 

নাঈমা সুলতানা বলেন, মোট সাতজনকে এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।

“তদন্তে আমরা বাবুল আক্তারকে আসামি হিসেবে পেয়েছি। আমরা আগে বারবার বলেছি হত্যাকাণ্ড কেন হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আমরা তদন্ত করেছি। ১ নম্বর আসামি বাবুল আক্তার কীভাবে জড়িত তা আমরা পেয়েছি।”

মামলার সাত আসামির মধ্যে বাকিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম।

এর আগে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের আসামি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে আবু নছর গুন্নু, শাহ জামান, সাইদুল ইসলাম শিকদার, নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলামের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। তাদের মধ্যে নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম সেই হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন।

২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে। তাদের পাঁচজন এ মামলার বর্তমান ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা।

২০৮৪ পৃষ্ঠার মূল কেইস ডকেট এবং ২১ ধরনের আলামত জমা দেওয়া হয়েছে মামলার অভিযোগপত্রের সঙ্গে। একটি ব্যাগে করে এসব নথিপত্র আদালতে নিয়ে আসা হয়, সেই ব্যাগের ওপর লাগানো ছিল মিতুর একটি বড় আকারের রঙিন ছবি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার এডিসি কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালত এটা দেখবেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলার ধার্য দিন আছে।”

এ মামলার কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেসার আদালতে। হেফাজতে নির্যাতন ও কারাগারে কক্ষ তল্লাশির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ও সোমবার দুটি অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তার। দুটি আবেদনের বিষয়ে ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য আছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন সে সময় পুলিশ সুপার পদে থাকা বাবুল আক্তার।

মিতু হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে ২০২১ সালের ১২ মে তার করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। এরপর সেদিনই বাবুলসহ ৯ জনকে আসামি করে নতুন হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

আইনি জটিলতার কারণে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ৬ মার্চ সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে বাবুলের করা মামলার তদন্ত শেষ করতে বলে আদালত।

বাবুল এখন নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।