কক্সবাজারে কর্মরত ভিনদেশি এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে খুন করান বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।
Published : 12 May 2021, 07:26 PM
পাঁচ বছর আগে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারই মামলা করেছিলেন।
সেই মামলা তদন্তদকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যত বাতিল করে দেওয়ার পর বাবুলকেই আসামি করে মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েকদিন পরই চট্টগ্রামে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। চট্টগ্রামের আগে কক্সবাজারে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
মামলায় মোশারফ বলেন, কক্সবাজার জেলায় চাকরি করার সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরে ফিল্ড অফিসার (প্রোটেকশন) পদে কর্মরত ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার প্রতিবাদ করায় মিতুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করা হত।
২০১৪ সালের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত ছিলেন বাবুল। তখন তার মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় রেখে গিয়েছিলেন তিনি।
ওই ফোনে ওই নারীর পাঠানো ২৯টি এসএমএস মিতু দেখে সেগুলো তার একটি খাতায় লিখে রেখেছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলায় তিনি বলেন, এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছেছিল। নির্যাতনের বিষয়টি মিতু তাকেও জানিয়েছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর আসামিদের আড়াল করার চেষ্টাও বাবুল করেছিলেন বলে তার শ্বশুরের অভিযোগ।
তিনি বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগ্রহ করা আসামিদের ছবি বাবুল আক্তারকে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু মুছা তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পারিবারিকভাবে পরিচিত ‘সোর্স’ হওয়া সত্ত্বেও সুকৌশলে তাদের শনাক্ত না করে জঙ্গিদের দ্বারা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে দাবি করে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। এরপর ঢাকা থেকে গিয়ে পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর জামাতা বাবুলের পক্ষেই ছিলেন তার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ। বাবুলও তার ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে উঠেছিলেন ঢাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে।
এরমধ্যে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ বাবুলকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বাবুলের পুলিশের চাকরি ছাড়ার পরও তার পক্ষেই ছিলেন মোশাররফ।
পরের বছর বাবুল ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় যাওয়ার পর জামাতাকে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেন মোশাররফ। এরপর সরাসরি অভিযোগি করেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, বাবুলের এলাকার এক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তার পরিণতিতে মিতু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
কিন্তু মঙ্গলবার বাবুলকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে পিবিআইর জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মোশাররফ। তাতে এই প্রথম ভিনদেশি এক নারীর নাম এল।
মামলার পর থানায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোশাররফ বলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা মিতুকে হত্যা করেছে। তদন্তকারী সংস্থা তদন্তে যাদের নাম পেয়েছে, তাদের সাথে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা তাকে জানানোর পর মামলাটি তিনি করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাবুলের ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।
এদের মধ্যে মুছা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাকে মিতু হত্যার পরপরই ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করছে।
বাবুলের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন করে আলাদা মামলা করেন মোশাররফ।
মামলা নথিভুক্ত করার পর পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি নেওয়ার জন্য পিবিআই থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তদন্তভার তাদের দেওয়া হবে।
এদিকে আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “ওই নারীর সাথে (বাবুলের) একটা সম্পর্ক ছিল। সেটার ডকুমেন্টস আমরা পেয়েছি। সেটা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে সেই ডকুমেন্টসটা আসলে ওই নারীর কি না?”
পারিবারিক কলহ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেন, পারিবারিক কলহ একটা ছিল। একটা পর্যায়ে তা ‘চরম আকার’ ধারণ করেছিল বলে জেনেছি।
এজন্য বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।
দুপুরে পাঁচলাইশ থানায় মামলার পর বেলা আড়াইটার দিকে বাবুল আক্তারকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহান পাঁচ দিনের রিমান্ড দেয় বাবুল আক্তারকে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।