“আমার হাজবেন্ড কি কোরবানির গরু? তাকে নিয়ে এভাবে এলাকায় মাইকিং করতেছে,” বলেন তামান্না।
Published : 08 Apr 2025, 09:24 PM
চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরিয়ে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে’ হুঁশিয়ারি করে পুলিশের মাইকিংয়ের ঘটনায় চটেছেন তার স্ত্রী তামান্না শারমিন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ফেইসবুক পেইজ থেকে একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তামান্না। রিমান্ডের আসামি তার স্বামী সাজ্জাদকে রশি বেঁধে রাস্তায় ঘোরানোকে ‘অপমানজনক’ এবং তাতে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভিডিওর শুরুতে তামান্না বলেন, “আপনারা আমাকে চেনেন। আমি সাজ্জাদের বৌ তামান্না। কোথাও কি কোনো নজির আছে একজন রিমান্ডের আসামিকে এভাবে গরুর মত রশি বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে ঘোরানোর?
“আমার হাজবেন্ডকে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ (বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি)। আমার হাজবেন্ড কি কোরবানির গরু? তাকে এভাবে এলাকায় নিয়ে নিয়ে মাইকিং করতেছে।”
তিনি বলেন, “আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি, এটা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার হাজব্যান্ডকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমান করাচ্ছে কেন? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, আমার হাজবেন্ড যদি অপরাধী হয় তার বিচার আদালত করবে।”
একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা ছোট সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে রাউজান ও বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় মাইকিং করেছে পুলিশ।
সোমবার নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ও আগের দিন রোববার রাতে রাউজানের কদলপুরে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি করে’ মাইকিং করা হয়। তবে ওই ঘটনার ভিডিও নিয়ে আলোচনা তৈরি হওয়ার পর পুলিশ বলছে, অভিযান থেকে ফেরার পথে লোকজন ভিড় করলে তাদের সরাতে মাইকিং করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট, হাতকড়া ও কোমড়ে দড়ি বেঁধে সাজ্জাদকে ঘোরানো হচ্ছে। তার চারপাশে ছিল থানা পুলিশ ও সোয়াট টিমের সদস্যরা।
সোমবার বিকালে বায়েজিদ এলাকায় তাকে নিয়ে মাইকিং করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম। মাইকে তাকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কোথাও সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ দেখলে তাদের ঘেরাও করে পুলিশকে খবর দেবেন।”
রোববার রাতেও রাউজানের কদলপুরে একইভাবে মাইকিং করে পুলিশ। সেখানে মাইকে বলা হয়, “কমিশনার স্যারের নির্দেশে আপনাদের এলাকার সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করলে তার পরিণতি সাজ্জাদের মত হবে।”
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাজ্জাদের স্ত্রী বলেন, “কোথাও কি কোনো নজির আছে একজন রিমান্ডের আসামিকে এলাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, গরুর রশি বেঁধে যেমন ইচ্ছা তেমন করতেছে প্রশাসন। আসলে কী, ওর ফ্যামিলির কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নাই, ওর জন্য কথা বলার কেউ নাই তো। আমিও তো মেয়ে মানুষ, আমার বিরুদ্ধেও দুই/তিনটা মামলা দিয়ে বসে আছে। এখন আমি কী করব বলেন?...তারা আমার হাজবেন্ডকে এত অপমান না করে গুলি করে মারতে পারতেছে না?”
গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলে ছোট সাজ্জাদকে ধরে পুলিশে দেয় লোকজন। সেসময় তাকে চান্দগাঁও থানার একটি খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলাতে রোববার তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের আদালত। আর সেদিনই চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ৩০ মার্চ ভোরে নগরীতে প্রাইভেট কার ধাওয়া করে দুইজনকে গুলিয়ে চালিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় মামলার বাদীর অভিযোগ, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর 'পরিকল্পনায়' ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ায় ওই হত্যাকাণ্ড চালানো হতে পারে বলে বাদীপক্ষের ধারণা।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ফেইসবুক লাইভে এসে প্রকাশ্যে থানার ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়ার দুই দিনের মাথায় ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।
আরও পড়ুন-
ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে পুলিশের মাইকিং
'কাড়ি কাড়ি টাকা ছেড়ে' ছোট সাজ্জাদকে বের করে আনার ঘোষণা স্ত্রীর
চট্টগ্রামে জোড়া খুনের মামলায় ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার, অন্য মামলায়
চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে প্রাইভেট কার থামিয়ে গুলি করে ২ জনকে হত্যা
'ছোট সাজ্জাদ ও স্ত্রীর পরিকল্পনায়' গাড়িতে জোড়া খুন: নিহতের মা
লাইভে এসে 'পেটানোর হুমকি' সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের, ওসির জিডি