তাদের দুইজনসহ সাতজনের নামে এবং পরিচয় না জানা আরও ছয়/সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 02 Apr 2025, 12:07 AM
কারাগারে থাকা ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর 'পরিকল্পনায়' চট্টগ্রামে প্রাইভেট কারকে ধাওয়ার পর গুলি করে দুইজনকে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের একজনের মা।
সাতজনের নাম দিয়ে হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর বাকলিয়া থানায় যে মামলা করেন নিহত বখতেয়ার উদ্দিন মানিকের মা ফিরোজা বেগম, তাতে এ অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে গত ১৫ মার্চ ঢাকায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের পুলিশের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকে।
অন্য আসামিরা হলেন- মো. হাসান, মোবারক হোসেন ইমন, রায়হান ও বোরহান।
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন মামলার তথ্য দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাতজন ছাড়াও পরিচয় না জানা আরও ছয়/সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে যে গাড়িকে ধাওয়া করে গুলি করে দুইজনকে খুন করা হয়, সে গাড়িতে ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত আরেক সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা।
তাকে ‘নিশানা’ করেই প্রতিপক্ষ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা ওই গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করছেন গুলিতে আহত এক যুবক ও নিহতের স্বজনরা।
রোববার ভোর রাতে নগরীর চকবাজার চন্দনপুরা এলাকায় ধাওয়ার পর প্রাইভেট কারে গুলি করে দুইজনকে হত্যা করা হয়। আহত হন আরও দুইজন।
নিহতরা হলেন- বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লাহ। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৬ এর মধ্যে। আহতরা হলেন- রবিন ও হৃদয়।
এজাহারে ফিরোজা বেগম বলেন, সরোয়ারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ছিলেন মানিক এবং ব্যক্তিগত কাজ করতেন আব্দুল্লাহ। সে হিসেবে মানিকের সঙ্গে আব্দুল্লার সখ্যতা গড়ে উঠে। রোজার সময় সরোয়ারসহ সবাই মিলে নতুন ব্রিজ এলাকায় আড্ডা দিতেন। প্রতিদিনের মত ঘটনার দিন রাতে আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে তাদের গাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নার পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামি সরোয়ারসহ অন্যান্যদের খুন করতে গাড়িতে হামলা চালায়।
এর আগে ওই গাড়িতে থাকা আহত মো. রবিন বলেছিলেন, তার সন্দেহ ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পেছনে সরোয়ারের হাত থাকতে পারে–এমন সন্দেহ থেকে তাকে খুন করতে সাজ্জাদের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
রবিন এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মল থেকে গত ১৫ মার্চ গ্রেপ্তার হন ছোট সাজ্জাদ।
হত্যাকাণ্ডের পর রোববার ওসি জাহিদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, বাকলিয়া রাজাখালী ব্রিজ থেকে প্রাইভেট কারটিকে ধাওয়া করা হয়। পরে চন্দনপুরা-বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে সেটিতে গুলি চালিয়ে দুইজনকে খুন করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. রবিন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রাইভেট কারে চালকসহ মোট ছয় জন ছিলেন। নিহত মানিক গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তার পাশে বসা ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।
“শাহ আমানত ব্রিজ সংলগ্ন বালুর মহাল থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পর কয়েকটা মোটর সাইকেলে কয়েকজন এসে গাড়ির দিকে করে গুলি চালাতে থাকে। বহদ্দারহাটের দিকে যাবার কথা থাকলেও ‘জীবন বাঁচাতে’ আমাদের গাড়ি বাকলিয়া এক্সেস রোডের দিকে চলে যায়। গাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আব্দুল্লাহ।”
গত ১৫ মার্চ সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্ত্রী তামান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ভিডিওতে তিনি ‘কাড়ি কাড়ি’ টাকা খরচ করে সাজ্জাদকে জামিনে বের করে আনার কথা বলেছেন। পাশাপাশি তার বিরোধী পক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেছেন “এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা।”
এদিকে গত ২০ মার্চ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় এক নারী নিরাপত্তা চেয়ে থানায় মামলা করেছেন; তার দাবি, আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে তিনি পুলিশকে 'সহায়তা' করেছিলেন।
মামলায় ওই নারী বলেছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ অন্তত ১১ জনকে তিনি আসামি করেন।
আরও খবর-
চট্টগ্রামে পুলিশকে গুলি করে পালানো 'ছোট সাজ্জাদ' ঢাকায় গ্রেপ্তার
'কাড়ি কাড়ি টাকা ছেড়ে' ছোট সাজ্জাদকে বের করে আনার ঘোষণা স্ত্রীর
ছোট সাজ্জাদকে 'ধরিয়ে দিয়ে' এখন নিরাপত্তা চেয়ে নারীর মামলা