“ভবিষ্যতে এভাবে যেন পাহাড় কাটার সুযোগ কেউ না নিতে পারে সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেন সিডিএ চেয়ারম্যান।
Published : 21 Apr 2025, 04:36 PM
পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর একটি ভবনে অভিযানে শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ।
সোমবার সকালে নগরীর আসকার দিঘীর পাড় এলাকায় ওই অভিযান শুরু হয়।
প্রায় চার বছর আগে ওই এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়েছিল ‘স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স’ নামে ৯২ জনের একটি দল। শুরু থেকেই সেখানে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছিল।
প্রায় ৩০ কাঠা জমির উপর ভবন নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছ থেকে তারা অনুমোদন নেয়। শর্ত ছিল ৪০ শতাংশ জমিতে ভবন নির্মাণের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ খালি রাখতে হবে, অক্ষত রাখতে হবে পাহাড়।
কিন্তু সেই শর্ত ভেঙে তারা পাহাড় কাটে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া অনুমোদনের চেয়ে বেশি জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, বড় আকারের টিনের শিট দিয়ে পুরো প্রকল্প এলাকা ঘেরা। সামনের দিকে ভবনের তিনতলার সমান কাঠামো উঠেছে। ভেতরের অংশে পাহাড় কেটে ঢালু করা হয়েছে। সেখানেও একাংশে ভিত্তি নির্মাণের কাজ চলছে।
অভিযান চলাকালে মালিক পক্ষের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
অভিযানে অংশ নেওয়া সিডিএ’র স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “স্বপ্নীল ফ্যামিলি নামের একটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আসকার দিঘীর পাড়ের এই পাহাড় কেটে এই ১৪ তলা ভবনটি করছিল। সিডিএ’র পক্ষ থেকে তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল।
“নোটিসের বিপরীতে তারা উচ্চ আদালতে গিয়েছে। চেম্বার জজের আদালত গতকাল তাদের পক্ষের যে আদেশ ছিল তা ভ্যাকেট করে দিয়েছে। এই আদেশ পাওয়ার পরপরই আমরা এই অভিযানটি পরিচালনা করছি। মূলত পাহাড় কেটে এবং নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে এই ভবনটি করা হচ্ছিল। পাহাড় কেটে কিছু করা পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন।”
সিডিএ’র অথরাইজেশন অফিসার তানজীব হোসেন বলেন, “শুরুর দিকে কিন্তু এখানে স্থাপনা ছিল না, তখন পাইলিং ও বেসমেন্টের কাজ শুরু করেছিলেন। তখনই আমরা তাদের বাধা দিই। সেসময় বিচ্যুতি দেখে যখনই নোটিস করি, তখন এর প্রেক্ষিতে কোর্টে গিয়ে ইনজাংশন নিয়ে আসে।
“আদালতের নির্দেশ থাকায় আমরা আগাতে পারছিলাম না। আজ সিডিএ চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। এখানে পাহাড়ের অবয়ব পরিবর্তন করেছে। পাহাড় কাটা হয়েছে। ৬০ শতাংশ জমি খালি রাখার কথা ছিল। তা না মেনে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
অনুমোদনের বাইরে যে অংশে ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে সেটুকু ভেঙে দেয়া হবে বলেও জানান সিডিএ’র অথরাইজেশন অফিসার তানজীব হোসেন।
উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করতে এসে পাহাড় কাটার মহোৎসব দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, “ভবিষ্যতে এভাবে যেন পাহাড় কাটার সুযোগ কেউ না নিতে পারে সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
উপস্থিত সিডিএ’র বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি বলেন, “এটা ভাঙার মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে একটা মেসেজ যাচ্ছে, যে অবৈধভাবে যদি নির্মাণ করা হয় ভবিষ্যতে কাউকে সহ্য করা হবে না।”
সোমবারের অভিযানে সিডিএকে সহায়তা করে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা। তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন, পাহাড় কেটে সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চার বছর আগে একবার এই ভবন নির্মাণকারীদের জরিমানাও করেছিল।