দোষী সাব্যস্ত হলে আইনের চোখে পলাতক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ ১৩ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
Published : 02 Aug 2023, 10:30 AM
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদের মামলার রায় ঘিরে বাড়ানো হয়েছে আদালতের নিরাপত্তা।
ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২৭ জুলাই তিনি রায়ের এ দিন ঠিক করে দেন।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস পাল জানান, রায় হবে বিকাল ৩টায়।
দোষী সাব্যস্ত হলে আইনের চোখে পলাতক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ ১৩ বছর কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনাকারী দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
সেজন্য সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আদালত পুলিশের পরিদর্শক হারুন অর রশিদ সকালে আদালত বসার আগে জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের এজলাসে নিরাপত্তা তল্লাশিও চালিয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। প্রবাসে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি, মা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নেন তিনি।
তারেক বিদেশে থাকা অবস্থায়ই দেশে এই পর্যন্ত চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় তার।
জোবায়দা চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে ছিলেন। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে তাকে বরখাস্ত করে সরকার। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে স্বামীর অপরাধে সহযোগিতা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাদের নেতার বিরুদ্ধে সাজানো রায় হচ্ছে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং আদালতের উপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
মামলা বৃত্তান্ত
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় করা দুদকের মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। এরপর মামলাটি আবার গতি পায়।
২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
এরপর চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান।
২১ মে মামলার বাদী জহিরুল হুদার জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২)/২৭(১) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় এ মামলার বিচার চলে।
২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের কারাদণ্ড।
আরও পড়ুন:
আয়বহির্ভূত সম্পদ: যে সাজা হতে পারে তারেক-জোবায়দার
আয়বহির্ভূত সম্পদ: তারেক-জোবায়দার রায় ২ অগাস্ট
অবৈধ সম্পদের মামলায় তারেক-জোবায়দার বিচার শুরুর আদেশ
তারেক-জোবাইদার রিট খারিজ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ