ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এ সংঘর্ষের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
Published : 18 Apr 2025, 06:54 PM
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহাল ইজারার দরপত্র বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুইজন আহতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় জামায়াতের কর্মীদের বিরুদ্ধে এক বিএনপি নেতা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান।
শুক্রবার দুপুরে ওসি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ এ অভিযোগ জমা দিয়েছেন ।
এর আগে বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মা ফার্মেসি মার্কেটে’ এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন- রাসেল আহমেদের ছোট ভাই ও বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা (৩২) ও পৌর বাজারের মা ফার্মেসির স্বত্ত্বাধিকারী রিয়াজ মৃধা (৪৭)। রিয়াজ বোয়ালমারী পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধার বড় ভাই।
এদিকে সংঘর্ষের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সেসব ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ‘মা ফার্মেসি মার্কেটে’ চলা এক শালিশ বৈঠকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল যুবক।
তাদের হামলায় মা ফার্মেসিতে আশ্রয় নেওয়া রবিন মোল্যার মাথা ফেটে যায় এবং আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন ফার্মেসির মালিক রিয়াজ মৃধা।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় বাংলা ১৪৩২ সালে বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের মধুমতি নদীর লঙ্কারচর বালুমহাল ১ বছরের জন্য ইজারার দরপত্র আহ্বান করে জেলা প্রশাসন। এ ইজারায় ১৫টি দরপত্র বিক্রয় হয়।
তবে এই দরপত্রদাতাদের সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়। সমঝোতায় দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করার অভিযোগ করেন এক দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাস।
জুয়েল বিশ্বাস আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি জামায়াত কর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা নিয়ামুল হাসান।
টাকা ভাগাভাগির এই বিরোধে বুধবার রাতে মা ফার্মেসি মার্কেট চত্বরে শালিশ বৈঠক বসেন পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন আলম চান, সাবেক পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা।
এ বৈঠকে জামায়াত কর্মী জুয়েল বিশ্বাস উপস্থিত হয়েছিলেন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে। তবে তার কোমরে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রটি দেখে ফেলে সেখানে থাকা লোকজন। পরে অস্ত্রটি কেড়ে নিতে চাইলে সালিশে বসা বিএনপির লোকজনের সঙ্গে জুয়েলের ধস্তাধস্তি হয়।
এর কিছুক্ষণ পরেই জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সালিশ বৈঠকে হামলা করে।
এই বিষয়ে জুয়েল বিশ্বাস বলেন, “বালুমহালের নিকোর (বালুমহালের সমঝোতার স্থানীয় নাম) ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিল রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার কাছে। সে টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মাসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ।
“কিন্তু সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে আমার উপর আক্রমণ করে। খবর পেয়ে আমার গ্রামের ভাই-ব্রাদার আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিনকে পেয়ে তারা মারধর করে।”
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন, “জামায়াতে ইসলামির ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার নিকট চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোকজন প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে।
“তবে লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালায়। জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে যেতে পারলেও আমার ছোট ভাইকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে তারা।”
বোয়ালমারী পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ মৃধা বলেন, “রাসেলের সঙ্গে দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা কাটাকাটি হলে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল বিশ্বাস। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারালো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়।
“এসময় সে পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল নিয়ে আমাদের ফার্মাসিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমার বড় ভাইসহ দুজন মারাত্মক আহত হয়।”
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঘটনার দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হামলায় আহতরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”