গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের জাদু কোন সমীকরণে

জাতীয় নির্বাচনের আট মাস আগে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তাও দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2023, 07:15 PM
Updated : 26 May 2023, 07:15 PM

গাজীপুর সিটির যে নির্বাচন আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা আজমত উল্লা খানকে দ্বিতীয়বারের মত নৌকার ভরাডুবি দেখাল, একষট্টি বছর বয়সে হঠাৎ ভোটের রাজনীতিতে নামা জায়েদা খাতুনকে পৌঁছে দিল মেয়রের আসনে, ভোটে না থেকেও সে নির্বাচনে আসলে জয় হল জায়েদার ছেলে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের।

আজমত উল্লার ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজয় আর জাহাঙ্গীরের ‘ম্যাজিক’ নিয়ে ভোটের পরদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

সেসব আলোচনায় আসছে নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি, আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়া, একজন মায়ের জন্য ভোটারদের সহানুভূতি, আজমতের দুর্বলতা আর কৌশলী জাহাঙ্গীরের কারিশমার কথা।

সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আট মাস আগে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তাও দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “মেয়র পদে নৌকার আজমত উল্লা খান হেরেছেন টেবিল ঘড়ির জায়েদা খাতুনের কাছে; মানে জাহাঙ্গীর আলম ভোটে না থেকেও মায়ের পেছনে থেকে যেভাবে কাজ করেছেন, তাতে আমি বলব জিতেছেন জাহাঙ্গীর আলম।”

তার মতে, ভোটের মাঠে নৌকা আর টেবিল ঘড়ির যে লড়াই হয়েছে, তা আসলে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ভাগ হয়ে গেছে দুই প্রার্থীর কাছে। সেই লড়াইয়ে মাকে জিতিয়ে এনেছেন ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা জাহাঙ্গীর।

“জাহাঙ্গীর নিজের প্রতি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায় জায়েদা খাতুনের নয়, এটা জাহাঙ্গীরের বিজয় হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বার্তা দেবে- বুঝে শুনে মাঠের বাস্তবতা দেখেই প্রার্থী দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগ অবশ্য হারের বিচার বিশ্লেষণের চেয়ে ‘ভালো নির্বাচন’ উপহার দেওয়াকেই বড় হিসেবে দেখাতে চাইছে। স্থানীয় নির্বাচনের এ ফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আওয়ামী লীগ জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং হয়েছে; যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।”

জাহাঙ্গীরের জুয়া

টঙ্গী পৌরসভার ১৮ বছরের চেয়ারম্যান আজমত সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্দলীয় প্রতীকের সেই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরও।

দলের চাপে শেষ পর্যন্ত তিনি আজমতকে সমর্থনের ঘোষণা দিলেও তাতে দলীয় প্রার্থীর জয় আসেনি। লাখো ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরেছিলেন আজমত।

২০১৮ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আজমতকে হটিয়ে দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রায় দুই লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র হন তিনি।

কিন্তু একটি ঘরোয়া আলোচনায় মন্তব্যের জেরে জাহাঙ্গীরের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও।

সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে এবার ভোটের আগে দলের ক্ষমা পেলেও মনোনয়ন আর পাননি জাহাঙ্গীর। আওয়ামী লীগ আজমতকে প্রার্থী করায় তিনি ফের বিদ্রোহ করে বসেন এবং মনোনয়নপত্র জমা দেন।

তবে খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে দল থেকেও তাকে আবার বহিষ্কার করা হয়।

পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কিনে রেখেছিলেন জাহাঙ্গীর। নিজে প্রার্থী হতে না পেরে অনেকটা ‘ডামি প্রার্থী’ মায়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে প্রচার-প্রচারণা মূলত তিনিই চালান। তার সেই জুয়াই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছে। 

ভোটের হিসাব

২০১৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম এ মান্নান ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ওই নির্বাচনে ভোট দেন।

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসানউদ্দিন সরকার পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। ১১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে ৫৮ শতাংশ ভোট দেন।

আর এবারের নির্বাচনে বিজয়ী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। পৌনে ১২ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪৮.৭৯ শতাংশ, অর্থাৎ অর্ধেকের মত।

তিন নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম নির্বাচনে শীর্ষ দুই প্রার্থী মিলে পেয়েছিলেন সোয়া ৬ লাখ ভোট। দ্বিতীয় নির্বাচনে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ। আর এবার তা নেমে এসেছে ৪ লাখ ৬১ হাজারে। 

তিন নির্বাচনের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে, যার কারণ বিএনপির ভোট বর্জন। গতবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার হেরে গেলেও প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়েছিলেন।

বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী না হলেও হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট।

Also Read: জায়েদার বাড়ি ঘিরে জাহাঙ্গীর-সমর্থকদের উৎসবের দিন

Also Read: ফলাফল মেনে আজমত অভিনন্দন জানালেন জায়েদাকে

তাহলে বিএনপির ভোট গেল কোথায়? ভোটের হিসাব বলছে, সেই ভোটারদের একটি অংশ এবার কেন্দ্রে আসেননি। আবার একটি অংশ হয়ত ভোট দিয়েছেন জাহাঙ্গীরের মায়ের টেবিল ঘড়িতে।

এই অনুমানের সমর্থন পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবেও। প্রথম নির্বাচনে আজমতের আড়াই লাখের পর দ্বিতীয় নির্বাচনে জাহাঙ্গীর পেয়েছিলেন চার লাখ ভোট। সেটাকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ধরলেও এবার তার চেয়ে ৬০ হাজার ভোট বেশি পড়েছে ভাগ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বাক্সে।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবে দেখা যায়, আজমত উল্লা খান ২০১৩ সালের চেয়ে এবার ৭০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন, আবার জাহাঙ্গীর ২০১৮ সালে চার লাখেরও বেশি ভোট পেলেও এবার তার মা জায়েদা খাতুন পেয়েছেন তার অর্ধেক।

“২০২৩ সালে আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুনের ভোট হিসাব করলেও চার লাখ পৌঁছেনি। এ ভোটের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার হিসাব নিকাশ হয়েছে।”

বিএনপির ভোট জায়েদার বাক্সে গেছে- এমন কথা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারাও বলছেন।

গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের ভোট জাহাঙ্গীরের মা জায়েদার কাছে গিয়েছে। প্রতিটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুজন-তিনজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল। তারা কিন্তু অনেক ভোট পেয়েছে। কিন্তু নৌকার ভোটগুলো তারা সেভাবে কালেক্ট করেনি।… ভোটের পার্থক্য বেশি ছিল না। সবাই আরেকটু খেয়াল রাখলে হয়ত নৌকার ভালো হইতো।”

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদী শামীম বলেন, “এখানে সরকারবিরোধী জোট ও ভোট একত্রিত হয়ে গেছে। বিএনপি ঘরানার প্রার্থী ছিল, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছিল- উনাদের ভোটগুলো কোথায় গেল। এখানে আওয়ামী লীগ ভার্সেস আদারস। এখানে এই মেকানিজমটা হইছে।”

জনপ্রিয়তার তুরুপ

আগের নির্বাচনে বিএনপি নেতার কাছে হারলেও এবার বিএনপিবিহীন নির্বাচন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজমতের জন্য বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছিলেন অনেকে। সেই সেই সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পারেননি।

ষাটের দশকের শেষভাগ থেকে ছাত্রলীগে যুক্ত আজমত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আজমত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। ফলে তার জয়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারে নেমেছিলেন দলীয় নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের ভোট ব্যাংক ভাগ হয়ে গেছে।

দলের তৃণমূলের অনেকের অভিযোগ, আজমত বড় নেতা হলেও মানুষের খুব কাছাকাছি তাকে পাওয়া যায় কম। টঙ্গীর বাইরে গাজীপুর সিটির বিশাল এলাকায় তার সেরকম কর্মকাণ্ডও নেই। এমনকি ভোটের প্রচারেও সব এলাকায় তাকে সেভাবে পাওয়া যায়নি। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গাজীপুর চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসাইন বলেন, “আজমত উল্লা খানের প্রচারে আরও মনযোগ দেওয়া উচিত ছিল। সামর্থ্যের চেয়ে সেখানে কর্মী কম ছিল। এখানে আমার মনে হয়, আরও একটা ঘটনা ঘটেছে। এখানে তো মেয়র ও কাউন্সিলর দুটি পদে নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বোধহয় স্থানীয়ভাবে কাউন্সিলরদের পেছনে বেশি সময় দিয়েছেন।”

অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর গত এক যুগের বেশি সময় ধরে গাজীপুরে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। মেয়র হওয়ার আগে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বহিষ্কার হওয়ার আগে তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, জেলা আওয়ামী লীগে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে নানা সুবিধা পেয়েছেন। তার প্রতিদান এবারের ভোটে পেয়েছেন তা মা।

জাহাঙ্গীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল আলম আসকর বলেন, “জাহাঙ্গীর একটা প্রশাসন, দল, গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে মাকে নিয়ে জয়ী হয়েছে। মানুষের ভালবাসা একমাত্র পুঁজি। মানুষকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে অনুৎসাহিত করা হইছে। এ কারণে ভোট কম পড়ছে। না হলে এখানে আরও অনেক বেশি ভোট পড়ত।”

Also Read: গাজীপুরে আজমতের নৌকা ডুবিয়ে মাকে ভাসালেন জাহাঙ্গীর

Also Read: গাজীপুরে কাউন্সিলর পদে জিতলেন যারা

আওয়ামী লীগের অনেকে যে জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করেছেন, সে কথা মানছেন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও। গাজীপুরের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে কেন্দ্র থেকে ২৮ সদস্যের যে দল গঠন করে দেওয়া হয়েছিল, সেই দলেও ছিলেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, " নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাজ পড়ে অনেকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে কাজ করেছে। তাছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগের সমর্থক কেউ কেউ উনার পক্ষে কাজ করেছে। জাহাঙ্গীরের মা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর জাহাঙ্গীর বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগেই আছেন।”

‘মায়ের প্রতি সহানূভূতি’

জাহাঙ্গীর তার নিজের প্রার্থিতার ঝুঁকি বুঝতে পেরে ‘ডামি’ হিসেবে বেছে নেন তার মাকে, যা ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়া সহজ করে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

ভোটের প্রচারের সময় জায়েদাও বলেছেন, তার ছেলে ‘নির্যাতনের শিকার’ হয়েছে, সে কারণেই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফলাও প্রচার চালিয়েছেন জাহাঙ্গীর।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, “মানুষের ভালবাসার কারণেই জাহাঙ্গীরের মা জিতেছে। মেয়র পদ থেকে তাকে বিতাড়িত করা, দলে থেকে বহিষ্কার করা, প্রার্থিতা বাতিল করা- এইসব মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। জাহাঙ্গীরের ওপর অবিচার করা হয়েছে। সেই কারণে তারা জাহাঙ্গীরের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাহাঙ্গীরকে যে দলে নেওয়া প্রয়োজন তার মাকে ভোটে জিতিয়ে সেটাই বার্তা দিয়েছে মানুষ।“

সুজনের আমজাদ হোসাইনের ভাষায়, এ নির্বাচনে মানুষ বিবেক খাটায়নি, আবেগ খাটিয়েছে।

“জাহাঙ্গীর ও তার মায়ের প্রচারের গাড়িতে দুইবার হামলা করছে। এটা তারা বড় করে মানুষকে দেখাতে পারছে। মানুষের সহানুভূতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে ভোট তো তিনি পাইছেন, অন্য দলের ভোটও তিনি আনতে পারছেন। ব্যক্তিগত লাভালাভের জায়গা থেকেই আওয়ামী লীগের অনেকে তার সঙ্গে গেছে। তারা দলের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে বেশি দেখছেন।”

‘শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ’

বৃহস্পতিবার রাতে চূড়ান্ত ফলে জায়েদা খাতুনকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টেবিল ঘড়ির প্রধান এজেন্ট জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, “গাজীপুরে নৌকা জিতছে, আর ব্যক্তি হারছে।”

আর দলের হার নিয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে, সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এটাই বড় কথা, কে জয় পেল আর কে পরাজিত হল সেটা নয়। নির্বাচনে একটি জায়গাতেও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি, এটাই বড় বিষয়।

"বিজয়ী প্রার্থী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন, সবাই সতস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে এসেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, নৌকা হারলেও শেখ হাসিনার জয় হয়েছে। আর মূল্যায়ন তো পরিচালনা কমিটি আলাপ আলোচনা করে জানাবে। তবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন, সেটা হয়েছে।"

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কাজী মোবারক হোসেন ও গাজীপুর প্রতিনিধি]

Also Read: আওয়ামী লীগ জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি: কাদের

Also Read: ভোটের ‘আসল চিত্র’ দেখিয়েছে গাজীপুর: আমির খসরু