“একটা চেষ্টা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখানোর জন্য, কিন্তু তার মাধ্যমে কী উঠে এসেছে আমরা দেখেছি সবাই,” বলেন আমির খসরু।
Published : 26 May 2023, 03:10 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন ‘সুষ্ঠু দেখানোর চেষ্টা’য় দেশের ভোটের ‘আসল চিত্র’ উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখাতে হবে… চেষ্টা করেছে। ওই চেষ্টার ফলাফলটা আমরা দেখে ফেলেছি।… কী উঠে এসেছে আমরা দেখেছি সবাই। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের আসল চিত্র।”
শুক্রবার সকালে ঢাকার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আমীর খসরু এবং বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। উদ্বোধন শেষে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন খসরু।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জিতে মেয়র হতে চলছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
জনগণের ‘ভোটাধিকার’ আনতে বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে খসরু বলেন, “আজকে আমরা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করছি। যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা না যায়, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনা না যায়, তাহলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।”
সবাইকে বিএনপির আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলটির এই নেতা বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের পরে এখন আরেকটা আসছে ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা অ্যাক্ট’। আরো আইন আসবে, আরো নিপীড়ন-নির্যাতনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
“বাংলাদেশে যদি আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারি, ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে আগামী দিনে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক কোনো সরকার আপনারা পাবেন না। সেজন্য নিশ্চিতভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন আমির খসরু। এর কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর গুরুত্বও তুলে ধরেন।
“নির্বাচনের আলোচনা আসছে পরে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আসার আগে নির্বাচনের আলোচনা একটি ব্যর্থ আলোচনা। যারা নির্বাচনের কথা বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও গণতান্ত্রিক অর্ডার ছাড়া নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তারা এই সরকারের পক্ষে কাজ করছে।”
‘মতপ্রকাশে বিশ্বাসীরাই কারা অন্তরীণ’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকে ‘একনায়কতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন।
সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া রিজভী তার কারাবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ড্রাকোনিয়ান যে ল, এতে অনেক সাংবাদিক কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় রয়েছেন। যারা ফেইসবুকে মতামত দেন, তারা এখন কারাগারের মধ্যে। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শাসন, এটাই হচ্ছে একনায়কতান্ত্রিক শাসন, এটাই হচ্ছে স্বৈরাচারী শাসন।
“সারাদেশে মতপ্রকাশে বিশ্বাসী মানুষরাই কারা অন্তরীণ হয়। আজকে দেশের গুণীজন যারা, তারাও মতাপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণে অনেক দূঃখকষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। যে সমস্ত গণমাধ্যমে কিছুটা সত্যের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল আহসান, সহ সভাপতি দীপু সারোয়ার এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন সুমন বক্তব্য দেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুষ্ঠানে সুইডেনে থাকায় সেখান থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সাফল্য কামনা করেছেন বলে জানান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল আহসান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাবেক সহসভাপতি আবু দাদরা জোবায়ের, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, প্রবীণ সদস্য মুফতি আহমেদ, খোরশেদ আলম, গাজী আবু বকরসহ ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ‘ঐক্যের সমৃদ্ধি’ স্লোগানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। বিকেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদ উপনেতো মতিয়া চৌধুরী।