“বিয়ে হয়েছে ৭ মাস হয়েছে। আগামী ঈদ-উল আজহায় আলীর দেশে ফেরার কথা ছিল।”
Published : 13 Mar 2024, 08:31 PM
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে দুই মাস আগে নাবিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মো. আলী হোসেন। তখন ঘরে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। কোরবানি ঈদে দেশে ফিরবেন কথা ছিল। তার ফেরার সেই আশা এখন পরিণত হয়েছে শঙ্কায়।
আলী বরিশালের বানরীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের উমারেরপাড় গ্রামের ইমাম হোসেন মোল্লার ছেলে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ'র নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটির ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়।
স্বজনরা জানান, যখন জলদস্যুরা জাহাজ জিম্মি করে, তখনই মোবাইল ফোনে বার্তা দিয়ে পরিবারকে আলী জানিয়েছিলেন, ‘মুক্তি পাওয়ার আগে আর হয়তো যোগাযোগ হবে না’। এর পর থেকেই আতঙ্ক আর অজানা শঙ্কায় দিন কাটছে তার পরিবারের
আলীর স্ত্রী ইয়ামিন বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “বিয়ে হয়েছে ৭ মাস হয়েছে। আগামী ঈদ-উল আজহায় আলীর দেশে ফেরার কথা ছিল। এখন স্বামীকে ফেরত চাওয়া ছাড়া আর কোনো কথা নেই; আর কিছু চাই না।“
আলীর বাবা ইমাম হোসেন মোল্লা স্কুলের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বলেন, তার দুই সন্তানের মধ্যে আলী ছোট। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সে-ই।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে বলেন, “ছেলে বলেছে দোয়া করতে।”
ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি খবর পাওয়ার পর থেকে অশ্রু ঝরছে মা নাসিমা পারভীনের চোখে। সন্তানকে ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
বানারীপাড়ার বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আলী নারায়ণগঞ্জ মেরিন একাডেমি থেকে ডিপ্লোমা পাস করে চাকরিতে যোগ দেন। গত চার বছর থেকে তিনি সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছেন। গত ৯ জুলাই বিয়ে করার পর ২৯ নভেম্বর আবার জাহাজে যায়।
“একদম নিরীহ এই পরিবারটির এ বিপদে গোটা এলাকার মানুষ এখন স্তব্ধ।”
বানারীপাড়া থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, তারা খবর পাওয়ার পর থেকেই আলীর পরিবারের সার্বিক সহায়তা দিচ্ছেন।
কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে।
জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লব, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এমভি আবদুল্লাহ থাকা ২৩ জন নাবিক এখন পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ আছেন জানিয়ে বুধবার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো মূল্যে নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন: