শেষবারের কথায় স্ত্রীকে জানান, এখন পর্যন্ত তিনি ভালো আছেন। তবে ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।
Published : 13 Mar 2024, 07:32 PM
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ’র ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লবের গ্রামের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
বিপ্লব ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজ পুর গ্রামের আবুল হোসেন ভুঁইয়ার ছেলে; মায়ের নাম রৌশনারা। বিপ্লব দুই সন্তানের জনক।
তার বাবা আবুল হোসেন ভুঁইয়া জানান, আট বছর আগে জাহাজে ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকরিতে যান তার ছেলে। চারমাস আগে তিনি বাড়িতে এসে একমাস থেকে আবারো জাহাজে চলে যান।
আবুল হোসেন আরও জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বিপ্লবের সঙ্গে তার কথা হয়। ছেলে তখন জানান, সোমালিয়ার জলদস্যুরা তাদের আটক করেছে।
“তখন ছেলে আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলে- ‘বাবা দোয়া কর, কী হবে জানি না’।”
বিপ্লবের স্ত্রী উম্মে সালমা সোনিয়া বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে ও বুধবার সকালে স্বামীর সাথে দুবার কথা হয়েছে। দস্যুদের হাতে জাহাজের সব নাবিক আটক হয়েছেন জানিয়ে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন বিপ্লব।”
তবে শেষবারের কথায় স্ত্রীকে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তিনি ভালো আছেন। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।
আবুল হোসেন ভুঁইয়ার চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লব সবার বড়। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছেলেকে ফিরে পেতে সরকার ও জাহাজ মালিকের সহযোগিতা কামনা করেছে বিপ্লবের পরিবার।
এদিকে, বুধবার বিকালে জাহাজের মালিক এসআর শিপিংয়ের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এখনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি।
মিজানুল ইসলাম বলেন, “জলদস্যুদের একটা কৌশল হল জাহাজ ক্যাপচার করার পর তারা সেইফ জোন তৈরি করে। তারপর সেখান থেকে নিজেদের ডিমান্ড জানায়। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা তাদের কোনো ডিমান্ড আমাদের জানায়নি। আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি হল নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করা। তারপর জাহাজ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা।”
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ'র নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল।
বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জলদস্যুরা।
কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি জলদস্যুর কবলে পড়ে।
জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লব, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এমভি আবদুল্লাহ থাকা ২৩ জন নাবিক এখন পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ আছেন জানিয়ে বুধবার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো মূল্যে নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন:
জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি
জলদস্যুর কবলে জাহাজ: এমভি আবদুল্লাহে জিম্মি যারা
জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা
জাহান মণি থেকে আবদুল্লাহ: ২৩ নাবিকের মুক্তি মিলবে কীভাবে
ছিনিয়ে নেওয়া ইরানি ট্রলারে করে এসে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি
এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা
এমভি আবদুল্লাহ: উৎকণ্ঠায় তারেকুলের পরিবার, থামছে না মায়ের কান্না