এমভি আবদুল্লাহ: উৎকণ্ঠায় তারেকুলের পরিবার, থামছে না মায়ের কান্না

“সাত বছর বয়স থেকে কখনও নামাজ-রোজা বাদ দেয় নাই আমার ছেলে। এমন একটি সোনার ছেলে কেমনে এমন দুর্দশায় পড়ল….।”

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 12:05 PM
Updated : 13 March 2024, 12:05 PM

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। 

বুধবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নের ছকড়িকান্দি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তারেকুলের বাবা মো. দেলোয়ার হোসেনের নিবিষ্টচিত্তে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। 

সাংবাদিকদের দেখে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য সকলের সহায়তা চান। সরকারের প্রতি আর্তি জানান, ওই জাহাজের সবাইকে জীবিত উদ্ধারের। 

দেলোয়ার বলেন, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তারেকুল স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। 

২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে যোগ দেন চাকরিতে।  

২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বরে তারেকুলের সঙ্গে নাটোরের মেয়ে মেডিকেলের ছাত্রী তানজিয়ার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এগারো মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।   

গত বছরের ডিসেম্বরে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে তারেকুল যোগ দিয়েছিলেন বলে তার বাবা জানান।  

তারেকুল খু্বই নম্র-ভদ্র একটি ছেলে বলে স্থানীয়রা যখন বিলাপ করছিলেন, তখন তার মা হাসিনা বেগমের কান্নার শব্দে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। ছেলের ছবি দেখে অনবরত কান্না করছেন আর তাকে ফিরিয়ে আনাতে সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। 

হাসিনা বলেন, “সাত বছর বয়স থেকে কখনও নামাজ-রোজা বাদ দেয় নাই আমার ছেলে। এমন একটি সোনার ছেলে কেমনে এমন দুর্দশায় পড়ল….।” 

জাহাজে তারিকুলের জিম্মির খবর পৌঁছালে করছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা এসে ভিড় জমান। তাদের একটিই আকুতি, যেকোন মূল্যে তারা তাদের প্রিয় তারেকুলকে ফেরত পাওয়ার|  

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে জলদস্যুরা। 

কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। 

জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

আরও পড়ুন:

এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা

ছিনিয়ে নেওয়া ইরানি ট্রলারে করে এসে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি

জাহান মণি থেকে আবদুল্লাহ: ২৩ নাবিকের মুক্তি মিলবে কীভাবে

জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা

জলদস্যুর কবলে জাহাজ: এমভি আবদুল্লাহে জিম্মি যারা

জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি