“আমাদেরকে সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সব আল্লাহর হাতে। মুক্তিপণ যদি না দেয় আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলবে”, বলছেন এক ক্রু।
Published : 13 Mar 2024, 12:27 PM
মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
বাংলাদেশি ওই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছেন, “এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে।
“এদেরকে যত তাড়াতাড়ি টাকা দিবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলছে। এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।”
ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে মঙ্গলবার জিম্মি করে জলদস্যুরা। বুধবার সকালে আগ্রাবাদে জাহাজের মালিক পক্ষের কার্যালয়ে জড়ো হন নাবিকদের স্বজনরা।
কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সেটি জলদস্যুর কবলে পড়ে।
নাবিকরা তাদের স্বজনদের ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের এখন নেওয়া হচ্ছে সোমালিয়াতে। মুক্তিপণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে দস্যুরা। টাকা না পেলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জাহাজটির ক্রু নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার হাজবেন্ড, র্যাংক জিএস, নুরুদ্দিন কালকে (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টা বাজে কল দিয়ে বলে যে, ‘আমাদেরকে জলদস্যু অ্যাটাক করছে’। আমরা সাথে সাথে অফিসে জানাই। মাঝখানে আছরের সময় একবার উনার সাথে কথা হইছে৷ লাস্ট কথা হইছে একবার ৬টা ৪৯-এ ইফতারের পরে।
“আমাকে ভিডিও কল দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করতেছে। বলতেছে, ‘আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। আমাদেরকে সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ আমার বাচ্চাকে দেখতে চায়। আমি ভিডিওতে দেখাই। তারপর দুইটা অডিও পাঠায়। বলে যে, ‘আমাদেরকে সোমালিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন সব আল্লাহর হাতে। মুক্তিপণ যদি না দেয় আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলবে’।”
জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান জাহাজের মালিক পক্ষের কাছে পাঠানো অডিওতে বলেন, “স্যার আমাদের মোবাইল টোবাইল সব সিজ করে নিচ্ছে। এটাই শেষ সুযোগ। আমাদের জাহাজের যে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে, ওটা যদি ওপেন রাখেন আর কি, ওখানে যে কোনো সিচুয়েশনে মেসেজ রাখার চেষ্টা করব।
“ওটা খুলে দিয়ে রাখতে বলেন, তাহলে আমরা সুযোগ মত যোগাযোগ করব।”
এ বিষয়ে জাহাজ মালিক কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।
“তাদের একটা কৌশল হল, জাহাজ ক্যাপচার করার পর তারা সেইফ জোন তৈরি করে। তারপর সেখান থেকে নিজেদের ডিমান্ড জানায়। আমাদের প্রথম প্রায়োরেটি হল নাবিকদের মুক্ত করা। তারপর জাহাজ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা।”
এক দশকের বেশি সময় আগে বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মনি উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে মিজানুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু তাদের কাছ থেকে জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধারে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি এবারও সফল হব।”