ময়মনসিংহের সব কেন্দ্রে ইসির সমান গুরুত্ব

“আচরণবিধির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থীদের বলা হয়েছে, কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা হারাতে পারেন।”

ইলিয়াস আহমেদময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 04:52 PM
Updated : 8 March 2024, 04:52 PM

রাত পোহালেই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থী ও ভোটাররা একটি সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করছেন।   

শনিবার নগরীর ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে ভোট। এবার দ্বিতীয়বারের মতো সিটির এই নির্বাচনে পাঁচ মেয়রসহ মোট ২২৩ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। 

২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারে নগরী মুখর করে রাখেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এতে ভোটারদের মাঝেও নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। 

মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের প্রচার চোখে পড়েছে ভোটারদের। তাদের একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। ঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়াই করা এই প্রার্থী নগরীতে প্রচারে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তৈরি করেছেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। 

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া) এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি) প্রচার চালিয়েছেন বেশ জোরেশোরেই। তাদের কর্মী-সমর্থকরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। 

এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। 

নির্বাচনের প্রচার ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, “প্রচার অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চাই, ভোটের দিনও যেন এমন পরিবেশ বজায় থাকে। তাহলে আমরা সপরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারব।” 

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, “আমি ৭০ বছরে এত বেশি প্রচার কখনো দেখিনি। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাজ সাজ রব ওঠেছে। এতে ভোটার উপস্থিতি অনেক বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।” 

থাকবে বাড়তি ইভিএম

শুক্রবার দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে সাতটি বুথ থেকে ইভিএম বিতরণ করে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। ১৩৪ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ইভিএম বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

১২৮টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০টি ভোটকক্ষের জন্য দেড় হাজার ইভিএম মেশিন থাকবে। প্রায় ৫০০ ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে যেন ভোট বিলম্ব না হয় সে কারণে বাড়তি ইভিএম রাখার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। 

তিনি বলেন, “নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো সংঘাতের আশঙ্কা দেখছি না। আচরণবিধির ক্ষেত্রে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থীদের বলা হয়েছে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা হারাতে পারেন। মেয়র, পুরুষ ও নারী কাউন্সিলর থাকায় প্রচারে ত্রিমুখী ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। সে কারণে ভোটার বাড়বে আশা করা হচ্ছে।” 

সব কেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব

নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সব ভোটকেন্দ্রেই সমান গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। 

সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার মিলে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া থাকবে মোবাইল টিম, স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিজিবি ও র‌্যাব। 

ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। ১ হাজার ৫৩৬ জন আনসার, সাত প্লাটুন বিজিবি, ১৭ টিম র‌্যাব কাজ করবে। সবার অংশগ্রহণে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। 

এবারের নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। একটি ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হবে। সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। 

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোটগ্রহানের দিন নির্ধারণ করে তফশিল ঘোষণা করেছিল ইসি। 

যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। ওই ভোটে কেবল কাউন্সিলর পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

আরও পড়ুন:

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ইভিএমসহ সরঞ্জাম যাচ্ছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে

শতভাগ আশাবাদী, আমিই ফিরছি: টিটু

অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহারের আশঙ্কা করছি: টজু

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন: জমজমাট ‘প্রচারযুদ্ধ’ শেষে উৎসবমুখর ভোটের আশা

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: কারও প্রচারে গতি, কেউ পিছিয়ে পড়ছেন

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন: বিএনপি ভোটে নেই, তবু তারা আশা নিয়ে মাঠে

ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, ভোটার উপস্থিতি আসল বিষয়: ইসি আলমগীর

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ভোটারদের সাড়া কতটা?

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে খাদ্য কর্মকর্তা

ফের সুযোগ চান টিটু, পরিবর্তনের ডাক আলম-টজুর

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী কে?

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: আধুনিক নগরী গড়তে ১৫ দফা টজু’র

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: প্রতীক পেয়ে প্রচারে প্রার্থী

ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল

ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ সরলেন রাজীব, সমর্থন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার: গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম কারাগারে

ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল

ময়মনসিংহে সিটি ভোটের হাওয়া, প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

ময়মনসিংহে মেয়র পদে ভোটে আওয়ামী লীগের ছয়জন, বিএনপি নেই