বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় যারা নৌকার পক্ষে ছিলেন তারা সবাই এখন তার পক্ষে রয়েছেন বলে দাবি করেন এমপি শান্তর এই অনুসারী।
Published : 08 Mar 2024, 08:45 AM
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিপক্ষ ‘অর্থ ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনকে পক্ষপাতদুষ্ট’ করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মেয়র পদপ্রার্থী সাদেক খান মিল্কী টজু।
হাতি প্রতীকের এই প্রার্থী ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি দাবি করেন, নগরীর দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগে বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় যারা নৌকার পক্ষে ছিলেন তারা সবাই এখন তার পক্ষে রয়েছেন।
সাদেক খান মিল্কী টজু ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি সারাজীবনই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এখন মতিউরের ছেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর বলয়ে কাজ করেন। ফলে শান্তর সমর্থকদের একটা অংশকে টজুর নির্বাচনি প্রচারে দেখা যাচ্ছে। টজু ময়মনসিংহ শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর রাজনৈতিক দ্বৈরথ সর্বজনবিদিত।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের টিটুর সঙ্গে মেয়র পদের ভোটের লড়াইয়ে টজু ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক) রয়েছেন।
শেষ মুহূর্তের নির্বাচনি প্রচারের ব্যস্ততার মধ্যেও বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে নির্বাচনি রাজনীতি ও আগামী দিনের ময়মনসিংহ নগরীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী।
প্রশ্ন: আপনি প্রথমবারের মত নির্বাচনের মাঠে এসেছেন। ভোটারদের কেমন সাড়া পেলেন?
সাদেক খান মিল্কী টজু: আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে অনেক দিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয়। অনেক নির্বাচনেই দায়িত্ব পালন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এখানকার মূল আওয়ামী লীগের তৃণমূলেই সব নেতাকর্মীই আমার সঙ্গে আছেন। আমি মনে করি, আমার জয়লাভের আশা সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন: আপনার মূল প্রতিপক্ষ নির্বাচনের রাজনীতিতে অনেক অভিজ্ঞ। তাকে কীভাবে মোকাবিলা করছেন, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন।
টজু: টিটুর অনেক নেতিবাচক দিক আছে। তিনি ১৫ বছর নগরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যা করেছেন, তাতে ময়মনসিংহ নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স, জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় মানুষকে জর্জরিত করেছেন। আমি মনে করি, তিনি প্রবল প্রতিপক্ষ। অর্থ, পেশিশক্তি থাকলেও পরিবর্তনের কারণেই মানুষ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; আমাকে তারা ভোট দেবে।
প্রশ্ন: এমপি মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থক হিসেবে আপনি এবং এহতেশামূল আলম ভোটের মাঠে আছেন। আপনাদের ভোট দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
টজু: আমি আবারও বলছি, নৌকার মার্কা বা সংসদ সদস্যের নির্বাচন যারা করেছেন তারা প্রত্যেকেই আমার সঙ্গে আছেন। যারা এমপির সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল, তারা আমার নির্বাচনও পরিচালনা করছে।
প্রশ্ন: এমন প্রচার আছে যে, আপনারা দুজনের মধ্যে একজন ইকরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুজনই মাঠে আছেন। কেন একজন প্রার্থী দিতে পারেলেন না?
টজু: আমরা এখানে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী আছি। টিটু আওয়ামী লীগ, আলম আওয়ামী লীগ, আমিও আওয়ামী লীগ। অতএব এখানে নির্বাচন উন্মুক্ত। চেষ্টা করা হয়েছিল, হয়ত কোনো কোনো পক্ষ। আমি কোনো চেষ্টার মধ্যে ছিলাম না। কারণ, আমি প্রথম থেকেই প্রতিপক্ষ দুজন জেনেই ভোটের মাঠে নেমেছি।
প্রশ্ন: সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত ও সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বিরোধের কথা সবাই জানে। বিগত সংসদ নির্বাচনে দুজন দুপক্ষে ছিলেন। সেই বিরোধী এখনও আছে। নির্বাচনে এর প্রভাব কতটা পড়বে বলে মনে করেন?
টজু: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে। কারণ, যারা ট্রাক প্রতীকের (টিটুর বড় ভাই আমিনুল হক শামীম দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই প্রতীকে লড়েছিলেন) নির্বাচন করেছিলেন, তারা আজকে টিটুর টেবিল ঘড়ির নির্বাচন করছেন। তাহলে শান্ত ও টিটুর বিরোধ তো রয়েই গেল। আর টিটু নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে তার বড় ভাইয়ের ট্রাক প্রতীকের নির্বাচন করেছিলেন। অতএব সেই বিরোধ রয়েই গেছে।
প্রশ্ন: টিটু এখানে দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র তিনি। তার কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
টজু: এই প্রশ্নটি এর আগেও আপনারা করেছেন। একটি পত্রিকায় এসেছে যে, টিটু তার কাজের মাত্র ২৩ ভাগ করতে পেরেছেন। ফলে আমি তাকে একশর মধ্যে ২৩ দেব। এসব কাজের মধ্যে।
প্রশ্ন: ভোটের মাঠের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আপনার কোনো শঙ্কা আছে কি?
টজু: আমি আশঙ্কা করছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বলতে চাই, তাদের অনেক টাকা, পেশিশক্তি। এসব টাকা ও পেশিশক্তি হয়ত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে ব্যবহার হবে। এটা ভোটারদের ক্ষেত্রে যেমন করবে; ঠিক তেমনি প্রশাসনকে পক্ষপাতদুষ্টু করতেও সম্ভবত তারা চেষ্টা করবে। এটি গত নির্বাচনে হয়েছে।
প্রশ্ন: কেন্দ্রে যাতে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয় তার জন্য আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি, মার্কাও দেয়নি। এখানে ভোটারের উপস্থিতি কেমন হবে বলে মনে করেন?
টজু: মেয়রের পাশাপাশি অনেক কাউন্সিলর নির্বাচন করছে। মূলত কাউন্সিলরাই প্রতিটি ঘর থেকে তাদের সমর্থকদের ডেকে নিয়ে কেন্দ্রে যাবে এবং নিজের প্রতীকে ভোট দেওয়াবে। সেই সূত্রে আমি মনে করি, ভোটার এখানে কেন্দ্রে অনেক বাড়বে।
প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশন এখানে কতটা স্বচ্ছভাবে ও সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে কাজ করেছে? তাদেরকে কি আপনি আস্থায় নিয়েছেন।
টজু: যদি এই মুহূর্তে বলেন, আপনি দেখবেন সারা শহরে টেবিল ঘড়ির (টিটুর প্রতীক) অনেকগুলো পিকআপ ভ্যান চলে, সেখানে সাউন্ড বক্স দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমি অনেকবার নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। তারা খুব সম্ভব একটাকে ধরে জরিমানা করতে পেরেছে। বাকিগুলো কিন্তু ঘুরছেই। ফলে আমি সন্দেহ পোষণ করছি, এখানে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রশ্ন: আপনি মেয়র হলে নগরবাসীর জন্য প্রথমেই কোন সিদ্ধান্তটা নেবেন?
টজু: প্রথমেই শহরটা পরিষ্কার করে দেব। ধুলাবালি থাকবে না। মানুষ যেন শ্বাস নিতে পারে। আমরা এখন শ্বাস নিতে পারি না। জলাবদ্ধাত ও যানজট দূর করা। আরেকটি কাজ হচ্ছে, হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় করা। এটাকে পুন:মূল্যায়ন করতেই হবে। নাগরিকদের দেওয়ার সামর্থ্য আছে এভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করব।
প্রশ্ন: ভোটের ফলাফল যাই হোক, মেনে নেবেন কিনা?
টজু: অবশ্যই, কেন না; যদি সুষ্ঠু ভোট হয়। মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রচার আছে যে, ইভিএমে কারসাজি হয়। যদি দেখি যে, ইভিএমে কারসাজি হয়েছে তাহলে ভিন্ন কথা। তবে অবশ্যই ফল মেনে নেব।