শতভাগ আশাবাদী, আমিই ফিরছি: টিটু

এমপি শান্তর সমর্থক হিসেবে পরিচিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে বিভক্তি ইকরামুল হক টিটুকে সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন ভোটারদের অনেকে।

ইলিয়াস আহমদময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 05:59 AM
Updated : 8 March 2024, 05:59 AM

বিগত দিনের কাজের মূল্যায়ন করে নগরবাসী তাদের সেবা করার জন্য এবং নগরীকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্য আবারও নির্বাচিত করবেন বলে আশাবাদী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী ইকরামুল হক টিটু।  

প্রায় আড়াই দশক ধরে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসা আওয়ামী লীগের তরুণ এই রাজনীতিবিদ এরই মধ্যে প্রচার ও গণসংযোগে অন্যদের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই রয়েছেন বলে নগরবাসীর অভিমত। 

তবে ৯ মার্চের ভোট নিয়ে আশাবাদী এই নেতা বলছেন, সব প্রার্থীই তাদের মতো করে কেন্দ্রে ভোট নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন এবং ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। তিনি কোনো হুমকি বা শঙ্কা দেখছেন না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর রাজনৈতিক দ্বৈরথ সর্বজনবিদিত। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের টিটুর সঙ্গে মেয়র পদের ভোটের লড়াইয়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক) এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি প্রতীক)। তারা দুজনই সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এমপি-সমর্থকদের এই বিভক্তি টিটুকে সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন অনেকে।

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার গেজেট হয়। পরের বছর ৫ মে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। যদিও সিটির প্রথম ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন টিটু। ওই ভোটে কেবল কাউন্সিলর পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

টিটু এর আগে দুইবার পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে এবং দুইবার কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকা টিটু জেলা আওয়ামী সহসভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল হক শামীমের ছোট ভাই।

শেষ মুহূর্তের প্রচারের ব্যস্ততার মধ্যেই সদ্যসাবেক এই মেয়র বুধবার কথা বলেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। বলেছেন, আগামী দিনে নগর নিয়ে তার পরিকল্পনার কথাও। 

প্রশ্ন: আগেও অনেকবার ভোট করেছেন, বিজয়ী হয়েছেন। এবার দলীয় সমর্থন নেই, প্রতীক নেই বরং আপনারা একই দলে তিনজন প্রার্থী। প্রচারে কেমন সাড়া পেলেন ভোটারদের?

ইকরামুল হক টিটু: দেখুন, আমিসহ মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রত্যেকেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এবং বিগত দিনে তারা কিভাবে মানুষের পাশে থেকেছেন, কী করেছেন, কী করবেন- এ বিষয়গুলো সম্মানিত ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি থেকে বলতে পারি, আমি আলহামদুলিল্লাহ প্রত্যেক ভোটারের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া এবং সমর্থন পাচ্ছি। সুতরাং, আমি আমার জয়ের ব্যাপারে ইনশাল্লাহ শতভাগ আশাবাদী।

এবং আমি আশা করছি যে, ভোটারদের দোয়া, সমর্থন এবং ভোটের মাধ্যমে আমি নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীকে আমার অসমাপ্ত যে কাজগুলো রয়েছে বা যেগুলো প্রক্রিয়াধীন প্রকল্প রয়েছে, এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ময়মনসিংহ উপহার দেব- সে ধরনের লক্ষ্য নিয়েই আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ থেকে আপনারা তিন প্রার্থী; এর মধ্যে দুজন আপনার বিরোধী-বলয়ের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। বিরোধীদের বিভেদ আপনাকে কোনো সুবিধা দেবে বলে মনে করেন?

টিটু: আসলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আমরা যে সংগঠন করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আমাদের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, দলীয় কোনো মনোনয়ন বা সমর্থন কোনোটাই থাকবে না। আমাদের দল থেকে একাধিক প্রার্থী হয়েছেন এবং অন্যান্য দল থেকেও হয়েছেন- আমাদের ভোটাররা আসলে তাদের প্রত্যেকেরই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে এবং কিভাবে আগামী দিনে ময়মনসিংহকে এগিয়ে নেওয়া যায় এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই ৯ তারিখ তারা ভোট দেবেন। এবং সেখানেই তাদের প্রতিফলন ঘটাবেন বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: ভোটের পরিবেশ কেমন? ভোট নিয়ে আপনার মধ্যে কোনো শঙ্কা আছে কিনা?

টিটু: আমি আমার অবস্থান থেকে বলব, আসলে আমরা অত্যন্ত উৎসবমুখর এবং একটা আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এখানে কোনো সমস্যা আমি দেখছি না। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ৯ তারিখ ভোটগ্রহণ হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

প্রশ্ন: বিএনপি নির্বাচনে আসেনি কিন্তু তাদের একটি বিরাট ‘ভোট ব্যাংক’ রয়েছে। সেই ভোট কতটা কেন্দ্রে আসবে, এলে সেই ভোট কোনদিকে যাবে বলে মনে করেন?

টিটু: যেহেতু আমরা দেখছি যে, অনেক ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত বা বিএনপির অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন, তারা নির্বাচন করছেন। স্বাভাবিক অর্থেই তাদের ভোট বিএনপি সমর্থক বা আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন তারাও ভোটকেন্দ্রে আসবেন। আসলে সার্বিকভাবে প্রতিটি নাগরিক কর্মের মূল্যায়ন করেই তারা আগামীদিনে তাদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন। আমি আমার অবস্থান থেকে যেটি বলছি, আমি নগরবাসীর কল্যাণের জন্য কাজ করেছি। সুতরাং দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে আমি প্রত্যাশা করব যে, এই কাজের মূল্যায়ন করে তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যে সুসম্পর্ক সেটির মূল্যায়ন করে ৯ তারিখ টেবিল ঘড়ি মার্কায় তারা ভোট দেবেন এটুক আস্থা বিশ্বাস সবার প্রতি রয়েছে।

প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় কেন্দ্রে ভোটার আনতে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগের সেই টার্গেট পূরণ হবে বলে মনে করেন?

টিটু: আশা করছি, যেটি আপনারা নিশ্চয়ই দেখছেন যে, পাঁচজন মেয়র পদপ্রার্থী আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। প্রত্যেকেই আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি যেন ৯ তারিখ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন। এর পাশাপাশি আমাদের সংরক্ষিত এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীও যাচ্ছেন। সুতরাং প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একদম অনুরোধ ভোটকেন্দ্রে যেন উপস্থিত হন। আমরা সে বিবেচনায় আশা করছি যে, আমাদের ব্যাপক সংখ্যক ভোটার ৯ তারিখ উপস্থিত থাকবেন।

প্রশ্ন: আপনার বিরোধীপক্ষ প্রচার করছে, আপনি মেয়র থাকাকালীন সিটি করপোরেশনের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি এবং গুটি কয়েক ঠিকাদার দিয়ে সিটি করপোরেশনের কাজ হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

টিটু: আসলে উনারা যে বিষয়টি বলে থাকেন, তবে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, একসময় টেন্ডার নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রায়ই আসত যে জোর-জুলুম করে টেন্ডার ছিনতাই করা হয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেন্ডারবাজি- এ ‘শব্দটা’ কিন্তু এখন বাংলাদেশ থেকে উঠে গেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করেছেন।

অর্থাৎ ই-টেন্ডার বাংলাদেশে যে কোনো প্রান্ত থেকে, যে কোনো ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ বাধাহীনভাবে একজন ব্যক্তি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারছেন এবং এখানেও তাই হয়েছে। সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা ঠিকাদারি কাজ করেন, তারা সেখানে অংশগ্রহণ করছেন। সুতরাং, এই যে তাদের প্রচার-প্রচারণাটা এটি একটি গুজব বা অপপ্রচার বা রটনা হিসেবেই আমি মনে করি।

প্রশ্ন: এবারও মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথমে নগরবাসীর জন্য কোন সিদ্ধান্তটি নেবেন।  

টিটু: আসলে তো একটি কাজের সঙ্গে আরেকটি কাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাথমিকভাবে বলতে পারি, যে কাজগুলো বেশি মানুষের উপকারে আসবে; অর্থাৎ যানজটকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা, জলাবদ্ধতাকে কমিয়ে নিয়ে আসা এবং টেকসই একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নেওয়া- এসব বিষয়েই প্রথমে বেশি গুরুত্ব দেব।

তবে এর সঙ্গে সহায়ক আরও কাজ আছে সেগুলোও ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি আরেকটা ছাড়া হবে না। সেভাবেই আমরা কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রশ্ন: ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন মেনে নেবেন কিনা?

টিটু: নিঃসন্দেহে যেহেতু আমি নির্বাচন করছি, সেহেতু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থী নির্বাচিত করার দায়িত্ব আমাদের ভোটারদের। সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেই বিশ্বাস ও আস্থা রেখেই আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।

প্রশ্ন: ব্যস্ততার মধ্যেই আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

টিটু: আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।