লামার ম্রো পাড়ায় মানবাধিকার কমিশন, শুনলেন ঘর পোড়াদের কথা

কংজরী চৌধুরী বার বার এ ধরনের সমস্যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে দায়ী করেন।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2023, 05:11 PM
Updated : 5 Jan 2023, 05:11 PM

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল।

হামলার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে দেওয়া হবে বলে জানান।

রোববার রাতে রেংয়েন ম্রো পাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়ে ফেলা হয়, ভেঙে ফেলা হয় তিনটি ঘর আর অন্য দুটি ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়।

ম্রো সদস্যরা এ ঘটনার জন্য লামা রাবার কোম্পানি লিমিটেডের লোকজনকে দায়ী করলেও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।

এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই তদন্ত কমিটি। তারা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন, পাড়াপ্রধান (কারবারি) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন।

কমিশনের অন্য তিন সদস্য হলেন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলম, কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। 

পরে কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আক্রমণকারীরা অসুস্থ মানসিকতার (মাদকাসক্ত) ছিল বলে জেনেছি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদেরকে আক্রমণ করেছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে ও তছনছ করেছে। তাদের টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে।”

“যেটা বাস্তবতা সেটা সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। যা জেনেছি সেগুলো প্রতিবেদন আকারে দেওয়া হবে, সুপারিশ যাবে। কিন্তু বাস্তবায়ন করবে সরকার।”

কংজরী চৌধুরী বার বার এ ধরনের সমস্যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে দায়ী করে বলেন, “এ সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যেত। একটা ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে (পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন)। যদি ভূমি কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারত তাহলে আজকে এই সমস্যা হতো না।”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই সদস্য আরও বলেন, “ভূমি কমিশন সভা আহ্বান করলেই একটি পক্ষ হরতাল ডাকে। কেন ডাকে তাও আমি জানি না। হরতাল পক্ষ এতই শক্তিশালী যে সরকার তাদের কাছে জিম্মি কি না তাও জানি না।

“সবাই মিলে এই সমস্যা (ভূমি) সমাধান করতে হবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। যতদূর মনে পড়ে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত ভূমি কমিশন তৎপর ছিলেন। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো মিটিং হতে পারেনি।”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “এখানকার ভূমিবিরোধ গত বছর এপ্রিল থেকে চলছে। এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল। একাধিক সুপারিশও করা হয়েছে।“

“ভূমিবিরোধ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো সঠিকভাবে পালিত হলে আজকে এ পরিস্থিতি দেখতে হতো না। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা আর হবে না। পরিদর্শনে যা দেখা হয়েছে খুব শিগগির সেগুলো কমিশনের কাছে প্রতিবেদন আকারে দেওয়া হবে।“

লামা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “চেষ্টা করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন, একটু গুছিয়ে অভিযোগ দেওয়া হবে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন:

লামায় রাতের আঁধারে ম্রোদের বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

লামায় জুমভূমির জঙ্গল কাটার অভিযোগ রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে

পাহাড়ের ৪০০ একর জমি ইজারা পাওয়ার দাবি লামা রাবার কোম্পানির

পাহাড়ি ঝিড়িতে ‘বিষ ছিটানোর’ প্রতিবাদে মানববন্ধন

লামায় এবার ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে

লামায় খাবার পানির ঝিরিতে বিষ দেওয়ার অভিযোগ

লামায় আদিবাসীদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি

বান্দরবানের লামায় ‘জুমের বাগান পোড়ানোয়’ উদ্বেগ

জুমভূমিতে আগুন: সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হল মিটিং

জুমভূমিতে আগুন: 'খাদ্য সংকটে' লামার ৩ পাড়ার ৩৬ পরিবার