সংবাদ সম্মেলনে নয় পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লামা রাবার কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
Published : 10 Oct 2022, 11:19 PM
বান্দরবানে লামা উপজেলার সরইয়ে বিরোধপূর্ণ ৪০০ একর জমি নিজেদের ইজারা পাওয়া দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে লামা রাবার কোম্পানি।
সোমবার সকাল ১১টায় বান্দরবান প্রেস ক্লাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
এ সময় সেখানে জোর করে স্থাপনা নির্মাণ, লেবার শেড ভাঙচুর, রাবার গাছ কেটে ফেলা ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আনেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যবস্থপানা পরিচালক জহিরুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন, শাহ কমিমুল হক, পরিচালক ইফতেখার আলম মজুমদার ও বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ ছিলেন।
এতে নয় পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, লামা রাবার কোম্পানি সরকারের অনুমোদন নিয়ে কোম্পানি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া লিজের সমস্ত আইন-কানুন মেনে তারা রাবার প্ল্যান্টেশন করে আসছেন। সেখানে ৬৪ জন শেয়ার হোল্ডারের প্রত্যেকের ২৫ একর করে মোট এক হাজার ৬০০ একর জমি রয়েছে। যারা ২৫ একর করে বরাদ্দ পেয়েছিলেন, প্রত্যেকের জায়গায় ঠিকমত প্ল্যান্টেশন করা সম্ভব হয়নি।”
“পরে ৬৪ জন মিলে একটা কোম্পানিতে পরিণত করে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড নাম দেওয়া হয়। কোম্পানির অধীনে সেই এক হাজার ৬০০ একর জায়গায় রাবার বাগান, প্ল্যান্টেশন ও বিভিন্ন ফলের বাগান করার পরিকল্পনা করা হয়।”
২০১৩ সালে প্রথমে দুই পরিবার এবং পরে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর তিন পাড়াবাসী মিলে ৩৬টি পরিবার তাদের লিজের জায়গায় বসতি গড়ে তুলে। লিজের জায়গায় বাস করেও তারা কোম্পানির পক্ষে কাজ না করে ‘তৃতীয় পক্ষের’ হয়ে কাজ করে বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, রাবার কোম্পানি তাদের মারার হুমকি দিচ্ছে ও ষড়যন্ত্র করে তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে- এমন ‘মিথ্যা অভিযোগ’ এনে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ‘তৃতীয় পক্ষের’ ইন্ধনে ইজারাপ্রাপ্ত জমিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে স্থাপনা নির্মাণ, লেবার শেড ও টেপার শেড ভাঙচুর, ১২ হাজারের বেশি রাবার গাছ কেটে ফেলা হয়। কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এ কারণে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের চার কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
তবে তিনপাড়াবাসীর আন্দোলনে কোন ‘তৃতীয় পক্ষ’ ইন্ধন দিচ্ছে এমন প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব দেননি লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান।
রাবার উৎপাদন বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাবার কোম্পানিগুলোর যে ফ্যাক্টরি আছে সেখানে ৫০-৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে রাবার প্ল্যান্টেশনে যে ৩০-৪০ হাজার টন রাবার উৎপাদন হয় সেখানে তাদেরও অবদান আছে।
গত ২৬ মার্চ লামা সরই ইউনিয়নে লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া ও রেংয়েন ম্রো পাড়া মিলে ৩৬টি পরিবার বসবসাস করা ৪০০ একর জায়গায় রাবার ও কাজু বাদাম চাষের লক্ষ্যে লামা রাবার কোম্পানি আগুন দেয়। আগুনে প্রায় ৩৫০ একর বনভূমি পুড়ে বিরাণ হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফলে কয়েক দিন ধরে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকেটে পড়ে তিনপাড়ার ৩৬টি পরিবার। এরপর থেকে ৪০০ একর জমি রক্ষায় আন্দোলন করে আসছে পাড়াবাসীরা। সম্প্রতি রেংয়েন ম্রো পাড়ার একটি ঝিরিতে বিষ ঢালা ও ৩০০টি কলাগাছ কেটে ফেলার অভিযোগ আসে রাবার কোম্পানির লোকজনের বিরুদ্ধে। তবে রাবার কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে।
আরও পড়ুন:
পাহাড়ি ঝিড়িতে ‘বিষ ছিটানোর’ প্রতিবাদে মানববন্ধন
লামায় এবার ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে
লামায় খাবার পানির ঝিরিতে বিষ দেওয়ার অভিযোগ
লামায় আদিবাসীদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
বান্দরবানের লামায় ‘জুমের বাগান পোড়ানোয়’ উদ্বেগ