লামায় এবার ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে

লামার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় তিনশ কলাগাছ কেটে ফেলা হয়।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 04:53 PM
Updated : 25 Sept 2022, 04:53 PM

‘বনভূমি পোড়ানো’ ও ঝিরিতে ‘বিষ ঢালার’ পর বান্দরবানের লামায় এবার ৩০০ কলাগাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রির লোকের বিরুদ্ধে।

শনিবার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় এসব কলাগাছ কেটে ফেলা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর রেংয়েন পাড়াবাসীর ব্যবহারের একমাত্র পানির উৎস ঝিরির উজানে বিষ দেওয়া অভিযোগ ওঠে।

তারও আগে ২৬ এপ্রিল রাবার ও কাজু বাদামের চারা লাগানোর জন্য ৪০০ একর জায়গায় আগুন দিয়ে অন্তত সাড়ে তিনশ একর বনভূমি পোড়ানো হয়।

রোববার বিকালে রেংয়েন পাড়ার কারবারি (গ্রাম প্রধান) রেংয়েন ম্রো অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সকালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ কোম্পানির ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক এসে তার পাড়ার বাসিন্দা রেং ইয়ুন বাগানে প্রায় ৩০০টি কলাগাছ কেটে ফেলে। কেটে ফেলার পরও তারা দিনভর সেখানে অবস্থান করছিল।

গতকাল তিনি পাড়ায় ছিলেন না জানিয়ে বলেন, “পাড়ার কয়েকজন বাধা দিয়েও তাদের থামাতে পারেনি।”

কারবারি রেংয়েন ম্রো বলেন, তার পাড়ায় মোট ১১টি ম্রো পরিবার রয়েছে। বনজঙ্গল থেকে বাঁশ ও কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রির আয়ে চলেন তারা। কেটে ফেলার কলাগাছগুলো চলতি বছর মে-জুন মাসে লাগানো হয়েছিল। কলা গাছগুলো বড় হলে কলা বিক্রি করে হলেও চলতে পারতেন তারা।

“কিন্তু রাবার কোম্পানির লোকজন কেটে নষ্ট করে ফেলায় তাদের পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের লোকজন কারও কলাগাছ কাটেনি। বরং গত বছর লাগানো আমাদের রাবার বাগানে দশ হাজার রাবার চারা কেটে দেওয়া হয়েছিল।”

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, কলাগাছ কেটে ফেলার বিষয়ে অবগত নন তিনি। এখনও কেউ অভিযোগ করেনি।

একদিন আগে [শনিবার] ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই তিনপাড়ার লোকজনের উদ্যোগে এই এলাকায় শিশুদের জন্য একটি স্কুল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ইউএনও জাবেদ কায়সার বলেন, স্কুল নির্মাণ বিষয়ে একটি পক্ষ অভিযোগ দিয়েছিল। স্কুল করতে গেলে একটা জায়গা লাগবে। আর যেহেতু এই তিনপাড়ার জায়াগা এখনও বিরোধপূর্ণ, তাই বিরোধ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণ কাজ করা যাবে না।

“এ কারণে ওসির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল স্কুল নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে।”

এদিকে, রাবার কোম্পানি তিন পাড়াবাসীর বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে জানিয়ে লামা সরই ভূমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য মথি ত্রিপুরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইতোমধ্যে রাবার কোম্পানি তিন পাড়াবাসীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক তিনটি মামলা করেছে।

লামা সরই ইউনিয়েন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেংয়েন ম্রো পাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাংকম ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া মিলে মোট ৪০০ একর জুমভূমি ও প্রাকৃতিক বন নিজেদের ইজারা জমি দাবি করে আসছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।