শ্রমিকেরা বন্ধ থাকা ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার ফটকে অবস্থান নিয়ে কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
Published : 17 Sep 2024, 01:40 PM
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক।
আশুলিয়ায় অসন্তোষ কাটিয়ে শ্রমিকরা যখন কাজে ফিরতে শুরু করেছিলেন, স্বাভাবিক হয়ে উঠছিল উৎপাদন, তখনই বন্ধ কারখানা খোলার আন্দোলনের মধ্যে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিল্পাঞ্চল।
এ ঘটনার পর আশপাশের সব কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস জানান, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে জিরাবো এলাকায় তিনটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ত্রিমুখী এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত মোছা. রোকেয়া বেগম (৩০) গাইবান্দা জেলার সদর থানার গুদারহাট এলাকার মাসুদ রানার স্ত্রী। তিনি জিরাবো এলাকায় এলাকার ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেডের কারখানায় সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি কারখানাটিতে যোগ দিয়েছিলেন।
শিল্প পুলিশের সূত্রে জানা যায়, ম্যাসকট গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানাটি শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা বন্ধ কারখানার ফটকে অবস্থান নিয়ে কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ সময় তখন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিলেও কয়েকজন শ্রমিক পাশের সাউদার্ন ও রেডিয়েন্স গার্মেন্টসে হামলা করেন। এরপরই ওই দুই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যাসকটের শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরিদর্শক নির্মল কুমার দাস বলেন, ম্যাসকট গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষে মাথায় ইটের আঘাত লেগে নারী শ্রমিক মারা যান। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
তাদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. ইজাজ বলেন, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৩৫ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
আর নজরুল ইসলাম (২৫) ও আব্দুল আজিজ (৩০) নামে দুইজন ভর্তি আছেন।
এছাড়া নারী ও শিশু হাসপাতালে ৭ জন ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. কাউসার।
এদিকে পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিশমাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এছাড়া নিহত রোকেয়া বেগমের মরদেহ গাইবান্ধায় তার বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
এখনো বন্ধ ১৮টি কারখানা
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, আগের বন্ধ কারখানার মধ্যে মঙ্গরবারও খুলেনি ১৮টি কারখানা। ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য সেগুলো বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।
এছাড়া নারী শ্রমিক নিহতের ঘোষণায় জিরাবো এলাকার অধিকাংশ কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, পোশাক শিল্পে অসন্তোষের পিছনে কিছু কারখানার মালিক পক্ষও দায়ী। তারা অসন্তোষ সৃষ্টি করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পাঁয়তারা করছে।
গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধি, সমানুপাতিকহারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে আসছিলেন আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা।
পরে নানা উদ্যোগে কারখানা গুলোয় কাজে ফিরতে শুরু করেছেন শ্রমিকরা। এর মধ্যেই মঙ্গলবার ১৩ (১) ধারায় বন্ধ ম্যাসকট গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন-
শান্ত আশুলিয়ায় কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা
শ্রমিক অসন্তোষ: আশুলিয়ায় ৮৬টি কারখানায় বন্ধের নোটিস, ১৩৩টিতে ছুটি
শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ৪৫ কারখানা
শ্রমিকদের কাছে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বললেন, কাজে যোগ দিন
আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানা খোলা, বিক্ষোভে ৪০টিতে ছুটি
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও অসন্তোষ, আশুলিয়ায় ৭৯ কারখানায় ছুটি
আবারও শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় নতুন করে ৩২ কারখানায় ছুটি ঘোষণা
আশুলিয়ায় শ্রমিকদলের সমাবেশে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫
কড়া নিরাপত্তায় খুলেছে আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা
কারখানায় হামলা-ভাঙচুর: আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ১৪