পুলিশ সুপার বলেন, “হা-মীম গ্রুপসহ ৪০টি কারখানায় দাবি-দাওয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিল না হওয়ায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।”
Published : 10 Sep 2024, 06:37 PM
টানা কয়েক দিনের শ্রমিক অসন্তোষ শেষে স্বস্তি ফেরায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা।
তবে দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করলেও দুপুর পর্যন্ত কোনো কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের জিরাবো, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, সরকার মার্কেট, জামগড়া, বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারখানাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকরা প্রবেশ করছেন। আর কিছু কারখানা এখনও খোলেনি। ফটকে বন্ধের নোটিশ সাঁটানোই রয়েছে।
আবার বেশকিছু কারখানায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে এ কারখানাগুলোতেও উৎপাদন শুরু হবে।
অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে কারখানা মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সেই অনুযায়ী, আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। প্রায় সব কারখানা খুলে দেওয়া হলেও ৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শ্রমিক জানান, অনেক কারখানায় মঙ্গলবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিছু কিছু কারখানা এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। এসব কারখানার শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন।
শ্রমিকরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেননি। বেশিরভাগ কারখানা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছে।
জনরন সোয়েটার কারখানার এইচআর এ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “বিজিএমইএর নির্দেশনা মেনে আমরা কারখানা পরিচালনা করছি। এর মধ্যে হঠাৎ করে বহিরাগত কিছু লোকজন কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের লিঙ্কিং এবং ট্রিমিং শাখা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য শাখায় কাজ চলছে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। তারা যদি ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন এবং শ্রমিকরা সচেতন হয় তাহলেই কারখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব। অন্যথায় এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এ ছাড়া সময়মতো পোশাক উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে যাবে বলেও মনে করেন এই গার্মেন্ট কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। আগের থেকে পরিস্থিতিও উন্নতির দিকে। ডং ইয়াংসহ বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করে। কিছু কারখানায় শ্রমিকরা প্রবেশ করলেও কাজে যোগ না দিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে।
“কিছু কিছু কারখানা নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। বাকি সব কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। যেসব কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন।”
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, “সকালে কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা প্রবেশ করেছে। প্রায় সব কারখানায় কাজ চলমান আছে।
“তবে হা-মীম গ্রুপসহ ৪০টি কারখানায় দাবি-দাওয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিল না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে তারা যে যারমতো চলে যায়।”
পুলিশ সুপার বলেন, “সোমবারের চেয়ে এখন পর্যন্ত উৎপাদন ভাল অবস্থায় রয়েছে। বাইরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ আমরা দিচ্ছি না। এখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, শিল্প পুলিশ ও জেলা পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। চতুর্দিকে মোবাইল পেট্রোল টিমগুলো চলমান রয়েছে।
“একই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত ফোর্স রয়েছে তারা সক্রিয়। কোনো ধরনের সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে তার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বহিরাগতরা যাতে শ্রমিকদের উসকে দিতে না পারে সেজন্য যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”