আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটছে খেয়ে-না খেয়ে; বাড়িতে রাখা খাদ্যপণ্য ও গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় বন্যা আক্রান্তরা।
Published : 21 Jun 2024, 01:48 AM
সেদিন ছিল ঈদের দিন, সোমবার। টানা বৃষ্টির পর হঠাৎ উজানের ঢলে ডুবতে থাকে সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। উৎসব মাটি করা বানের এ পানি দেখে সকালে আর বাড়ি ছাড়তে পারেননি লেবারপাড়ার বাসিন্দা শানুর আহমদ উজ্জ্বল। তবে শেষমেষ দুপুরের পর আর বাড়িতে থাকা হয়নি তাদের।
যখন ঘর ছাড়তে বাধ্য হন তখনও বড় এক বিপদ এসে হাজির হয় দুয়ারে। পানিতে পড়ে যায় তাদের এক বছরের মেয়ে। বানের পানিতে ভেসে যাওয়া সেই মেয়েকে উদ্ধারের ভয়ানক সেই স্মৃতিকে সঙ্গী করে দিন কাটছে এ পরিবারের।
বৃহস্পতিবার বিকালে উজ্জলের সঙ্গে যখন কথা হয় তখনও স্ত্রী-সন্তানসহ তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি মাড়িয়ে দিনের বেলা একবার বাড়িতে গিয়েছিলেন; তবে নিজেদের ঘরে ফেরার মত উপায় দেখেননি। বললেন, ঘর থেকে পানি এখনও নামেনি।
তার মত এ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেকেই পানি ভেঙে প্রতিদিনই বাড়িঘরে যাচ্ছেন। গিয়ে দেখে আসছেন ফেরা যাবে কি না। তবে বেশির ভাগেরই ভিটেয় ফেরার মত পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
শুধু সুনামগঞ্জের এ পৌরসভা নয়, উত্তর-পূর্বের জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বানভাসা পানিতে ভুগছেন লাখো মানুষ। গত কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় দুর্ভোগ আর দুর্দশা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে চুরির ভয় আর গবাদিপশু নিয়ে অনিশ্চিয়তার পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নেত্রকোণা ও মৌলভীবাজারের নিচু এলাকাও বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। বুধবার থেকে কোথাও কোথাও পানি নামলেও অন্যদিকে বাড়ছে।
সিলেট অঞ্চলের এসব জেলার বাইরে উত্তরের বন্যার পানি ঢুকছে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে। পানিবন্দি হয়ে পড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। দুর্ভোগের দিন অপেক্ষা করছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারি, লালিমনিরহাট, রংপুরের বাসিন্দাদের সামনে।
উত্তরের এসব জেলার অনেক স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আবার কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় আবাদি ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬ নদীর পানি বেড়ে চলার কারণে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধায় সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার নদীর পানি কিছুটা কমায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে শত শত একর ফসলি জমি।
মেয়েকে নিয়ে উজ্জ্বলের বেঁচে ফেরা
চার দিন আগে চোখের সামনে একটু একটু করে বাড়িতে বন্যার পানি ঢোকার সেই দিনের বর্ণনা দেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠনে পেশায় শ্রমিক উজ্জল।
তিনি বলেন, ভোর থেকেই তার বাড়ির উঠানে পানি জমতে শুরু করেছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢুকে যায় ঘরের মধ্যেও। চকির উপরে কোনো রকমে পরিবারের লোকজন নিয়ে টিকে ছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর ঘরের মধ্যেই কোমর সমান পানি হয়ে গেলে আর সেখানে থাকার উপায় ছিল না।
দুপুরের পর তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠবেন। তাড়াহুড়োর মধ্যে বাড়ি ছাড়তে গিয়ে উজ্জ্বলের এক বছরের মেয়ে জান্নাতুল আজহা পানিতে পড়ে যায়; ভেসে যায় স্রোতে।
বিপদের মধ্যে সবাই মিলে মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মেয়ে বেঁচে যায়। পরে সবাই মিলে এসেছেন ছাতক পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল হাইস্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে।
উজ্জ্বলের পরিবারের ভাষ্য, ঈদের দিন ঘর ছেড়েছেন। ফলে ঈদ আর এবার হয়নি তাদের। কোরবানির মাংসও দেখেননি।
বৃহস্পতিবার বিকালে আশ্রয়কেন্দ্রে উজ্জ্বল বলছিলেন, “ঘরো কোমরপানি দেখিয়া ঘর তনি বারইতে গিয়া আমার মেয়ে পানিত পইড়্যা যায়। তারে বাঁচাইতে অনেক কষ্ট অইছে। অনেও ইস্কুলো আছি।
“আইজও ঘরো গিয়া দেখি হাঁটুপানি। আমরার অবস্থা খুব খারাপ। খানি নাই, রান্নার ব্যবস্থা নাই। তবে সরকারিভাবে দুইবার খিচুড়ি পাইছি।”
বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের যে দুটি উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তার একটি ছাতক; অপরটি দোয়ারাবাজার।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে ছাতকে প্রায় চার লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এ উপজেলার ৫৪৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত লোকের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ জন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন সাড়ে ১০ হাজার মানুষ।
ভয় জাগাচ্ছে দুবছর আগের বন্যা
ছাতক পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল হাইস্কুলের এই আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অনেক মানুষের অবস্থাই উজ্জ্বলের মত।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে এলেও তারা পানি ভেঙে প্রতিদিনই বাড়িঘরে যাচ্ছেন। কারণ, বাড়িতে তাদের খাদ্যপণ্যসহ সংসারের সব জিনিসপত্র রয়েছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। কেউ কেউ গবাদিপশু উঁচু সড়কে ঘর করে রেখেছেন। আছে বাড়িঘরে চুরির ভয়ও।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও খাবারের সমস্যার কথা জানিয়ে তারা বলছিলেন, বন্যায় ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাড়ি ফিরলেও তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। এর মধ্যে দুই বছর আগে ২০২২ সালে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার স্মৃতিও তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
ছাতক পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল হাইস্কুলে ঈদের দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার। এখনও তাদের ঘরবাড়িতে পানি। ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র ও জরুরি জিনিসপত্রও বানের পানিতে নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
একই আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদের দিন দুপুরে উঠেছেন ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি গ্রামের শ্রমজীবী নারী ফাতেমা বেগম ও সুনুর মিয়া দম্পতি। সঙ্গে তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সারাদিন তাদের আশ্রয়কেন্দ্র আর বাড়িঘর করতে হচ্ছে।
ফাতেমা বেগম বলছিলেন, “আমরা কামলা মানুষ। কাম করলে খাই। এখন বইন্যার লাগি কাজখাম বন্ধ। ঘরো খাবার, তেলপানি যা আছিল পানিতে ভাসাইয়া নিছে। কোনো মতে ইস্কুলে আইয়া জান বাছাইছি। ইস্কুলো খাইয়া না খাইয়া আছি।”
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে চেরাপুঞ্জির অবস্থান। সেখান থেকে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে পানি নেমে আসতে চার ঘণ্টা এবং সুনামগঞ্জ শহরে আসতে লাগে ছয় ঘণ্টা।
এ অবস্থায় ২০২২ সালের জুনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলা মানুষজন।
বুধবার রাতে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার পানি আর বিশেষ বাড়েনি। বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি ১২৯ সেন্টিমিটার, দিরাইয়ে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুনামগঞ্জে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।
সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলা। সেখানে ৯৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৯১ হাজার।
তবে বন্যা কবলিত বেশিরভাগ লোকজনই আশ্রয়কেন্দ্রে না এসে নিজের বসতঘরে মাচা বেঁধে এবং খাটের উপর খাট বসিয়ে অবস্থান করছেন। তারা ঘরের আসবাবপত্রের মায়ায় ঘর ছাড়তে চান না বলে জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য বলছে, জেলায় এ পর্যন্ত ৬৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৪৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসে সপরিবারে ওঠেছেন।
সদর উপজেলায় এক হাজার ৯৭০, বিশ্বম্ভবরপুরে ৫০০, শান্তিগঞ্জে দুই হাজার, জগন্নাথপুরে ৭৫০, শাল্লায় ২৯০, দিরাইয়ে চার হাজার ৪৪২, ধর্মপাশায় ১১ জন, জামালগঞ্জে ১৬৫, তাহিরপুরে ৩০০, ছাতকে ১০ হাজার ৫১১ এবং দোয়রাবাজারে ২৯ হাজার ১০৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।
বন্যা কবলিত এলাকায় ৯৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ৫ হাজার ২৩৩ প্যাকেট, গোখাদ্য সাড়ে ৮ লাখ ও শিশুখাদ্যে সাড়ে ৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে দুপুরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিরামপুর এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার পরিবেশন করেন। তিনি পরে বন্যা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এদিকে বিকাল ৫টার দিকে জেলা শহরের ষোলঘর মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১০টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গবাদিপশুও। মাদরাসার সিঁড়িতে রেখেছেন গরু-ছাগল।
চিড়ামুড়ি খেয়ে কোনোমতে দিন কাটালেও গোখাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানালেন সেখানে আশ্রয় নেওয়া কৃষক নানু মিয়া। তার বাড়ি সুরমা নদীর পাড়ের মঈনপুর গ্রামে। তার পরিবারের মোট সাতজন আর তিনটা গরু নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
নানু মিয়া বলছিলেন, “বইন্যার পানিতে আমার ঘরবাড়ির সবতা ভাইস্যা গেছে। বাচমু কিনা এই টেনশনে আছলাম। একটা নৌকা যোগাড় কইরা গরু আর সাতজন আইছি।”
তিনি বলেন, “ঈদের পরদিন ওঠছিলাম। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কুন্তা পাইছি না। নিজেরা ইট জোগাড় কইরা চুলা বানাইয়া ডালভাত খাইতেছি। তবে গরু তিনটা বাছাইতাম পারছি এইটাই শুকরিয়া।”
গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা
এদিকে বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে পড়ে জেলা তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় দুজন এবং বড়লেখায় একজন মারা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছয় হাজার ২৫৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সঙ্গে করে ২০০ গবাদিপশু নিয়ে এসেছেন।
বড়লেখা উপজেলার মোট ১০টি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। উপজেলার দাসের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন দাসের বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম শংকরপুর গ্রামের ছওয়াব আলী। তিনি পরিবারের আটজনকে নিয়ে আছেন।
একই আশ্রয়কেন্দ্রের আরেকটি ঘরে আছেন উপজেলার পানিসাওয়া গ্রামের রিকেন্দ্র দাস ও ছেলে কিশন দাস। তাদের পরিবারে সাড়ে চার বছরের এক শিশু, তিন নারীসহ মোট ছয়জন সেখানে আছেন।
ছওয়াব আলী ও রিকেন্দ্র দাস বলছিলেন, গ্রামে পানি থাকলেও লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চান না। কারণ, বাড়িতে তাদের মালামাল রয়েছে। বিশেষ করে গবাদিপশুর চিন্তাই বেশি। এ কারণে, অনেকেই বাড়িতে মাচা করে থাকছেন। এলাকায় গোখাদ্যের সঙ্কটের কথাও বলেন এই দুজন।
একই কথা বলেন সেখানে থাকা আরও কয়েকজন।
গবাদিপশু নিয়ে দুচিন্তার কথা বলেছেন নেত্রকোণা জেলার বানভাসী মানুষেরাও। জেলার ছয় উপজেলার অন্তত ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মোহনগঞ্জ উপজেলায় বানের পানি থেকে এক শিশু মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বারহাট্টা উপজেলায় আসমা, চিরাম, রায়পুর ও সিংধা ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
উপজেলার সিমিয়া গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান বলেন, “গ্রামে পানি ঢুকে গেছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় বাড়ি থেকে বের হতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দোকানপাটে যেতে পারছি না।
“বিশেষ করে গরু-বাছুর নিয়া বেকায়দায় আছি। বাড়ির সামনে পতিত সব জাগা ডুবে যাওয়ায় গরুর খাদ্য মিলাইতে পারতাছি না।”
একই কথা বলেন কলমাকান্দা উপজেলার হিরাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা জালাল আকন্দ। উপজেলার মোট আটটি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
জালাল আকন্দ বলছিলেন, “বাড়িতে গোলায় থাকা সারা বছরের খাওয়ার ধান পানিতে ভিজে গেছে। এগুলো মনে হয় না আর কোনো কাজে আইবো।
“গরু-ছাগল লইয়া বেশি বিপদে পড়ছি। গরুরে কি খাওয়াইবাম। শিশুদের নিয়াও সমস্যায় পড়ছি। চারদিকে পানি আর পানি।”
সদর উপজেলার কেগাতি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বন্ধপাটলি গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলছিলেন, তার সাত পুকুরের সব মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধা সাড়ে ৬টার দিকে নদ-নদীর সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। কংশ নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি ৭১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।
সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬১ মিটার এবং বিজয়পুর পয়েন্টে ২ দশমিক ৯৯ মিটার নিচ দিয়ে বইছে।
এ ছাড়া জেলার হাওরাঞ্চলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন
লালমনিরহাটে পানি কমছে তিস্তা-ধরলার, শুরু হয়েছে ভাঙন
কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি, ধরলা-তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপর
সরকারের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ
গাইবান্ধায় সব নদ-নদীতে পানি বাড়ছে, বিপৎসীমার উপরে তিস্তা
এইচএসসি: সিলেট বিভাগের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত
সুনামগঞ্জে ডুবে আছে ঘরবাড়ি, ভোগান্তি চরমে
সুনামগঞ্জে দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
ঢলে ডুবছে সুনামগঞ্জ, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
বিপৎসীমার উপরে সুরমা, বন্যার শঙ্কা
বন্যা: শাবিতে ক্লাস অনলাইনে, পরীক্ষার নতুন সময়সূচি
সিলেটে কোথাও পানি কমেছে, কোথাও বেড়েছে
সিলেটে ডুবেছে নতুন এলাকা, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যায় লাফ
সিলেটের তিন হাসপাতাল চত্বরে বন্যার পানি
ঢলের পানিতে ডুবে ২ জেলায় চার শিশু-কিশোরের মৃত্যু
নেত্রকোণায় পানিবন্দি ৮ ইউনিয়ন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন মানুষ
নেত্রকোণায় বাড়ছে নদ-নদীর পানি,বন্যার শঙ্কা
সিলেটে জলাবদ্ধ ড্রেনে পড়ে শিশুর মৃত্যু