চট্টগ্রামের ৬ উপজেলার আড়াই লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার প্রস্তুতি

পরিস্থিতি বুঝে সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই উপজেলার উপকূল থেকে আড়াই লাখ মানুষকে সরানোর প্রস্তুতি রেখেছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 09:12 AM
Updated : 13 May 2023, 09:12 AM

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা এগিয়ে আসতে থাকায় চট্টগ্রাম জেলার উপকূলের ছয় উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে।

সমুদ্র তীরবর্তী এই ছয় উপজেলা হলো সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই।

গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সন্দ্বীপ ও বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে সাগর তীরের চার ইউনিয়ন সারিকাইত, মাইটভাঙ্গা, আজিমপুর ও ‍মুসাপুর। এবারও ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে এই চার ইউনিয়নের সাগর তীরে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা।

সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সাগরপাড়ের ইউনিয়নগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে বেড়িবাঁধের আশপাশে ও নিচু এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস।

“আমাদের ১৬২টি আশ্রয় কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা প্রায় দেড় লাখ। শনিবার বিকাল ৫টার মধ্যে আমরা বেড়িবাঁধের আশেপাশের লোকদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে চাই। সে লক্ষে কাজ চলছে।”

সিত্রাং এ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণে সাগর তীরের আরেক উপজেলা বাঁশখালীর সাধনপুর, খানখানাবাদ, চাম্বর ও শেখেরখীলর এলাকার মানুষ। বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানিও ঢুকে পড়েছিল লোকালয়ে।

বাঁশখালীর ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আমাদের সাগর তীরের ইউনিয়ন ১০টি। এক লাখ ধারণ ক্ষমতার ১১০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে।

“উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু-বাজার ও ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নারী, শিশু ও বয়স্করা ইতিমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে। আমরা সচেতন আছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় একটু আগে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।”

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে শনিবার রাতে জোর তৎপরতার চালানো হবে জানিয়ে ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে আমরা বল প্রয়োগও করব।”

সাগর পারের আরেক উপজেলা আনোয়ারায় মোট ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এখানে সাগরের কোল ঘেষে ছয়টি ইউনিয়ন থেকে ৫-৬ হাজার মানুষকে সরাতে হতে পারে বলে জানান ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন।

দক্ষিণের আরেক উপজেলা কর্ণফুলীর জুলধা, চরলক্ষ্যা ও চর পাথরঘাটা এলাকায় ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি বলে জানান ইউএন মো. মামুনুর রশিদ।

তিনি বলেন, “আমাদের ১৮টি স্থায়ী ও ৩০টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া যাবে। আমরা এখন ডাঙার চর এলাকায় আছি। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে আহ্বান জানাচ্ছি।”

উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় সাগর তীরে তিনটি ইউনিয়ন আছে। এখানে ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজারের বেশি।

মীরসরাইয়ের ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সাগর পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও দূরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছি। এখন আছি সায়েরখালীর দুর্গম ডোমখালী এলাকায়।

“স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের সাথে মাঠে আছেন। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও সরঞ্জাম ইতিমধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।”

উত্তরের আরেক উপজেলা সীতাকুণ্ডে ২৫ টি স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন।

পুরো চট্টগ্রামে জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ১০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

প্রয়োজনে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

অন্যদিকে শুক্রবার রাত থেকেই নগরীর পতেঙ্গা সৈকত, কাট্টলী রানী রাসমনি ঘাট এবং আকমল আলী রোড এলাকার জেলে পাড়া থেকে প্রায় তিন হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে অতি ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসের সতর্কতা জারির পর বন্দর নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় গুলো থেকেও লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার সকাল থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপে চট্টগ্রাম বন্দরের ‘অপারেশনাল কার্যক্রম’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরআগে শনিবার সকাল ৬টা থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান ওঠানামাও বন্ধ রাখা হয়েছে।

Also Read: ধসের শঙ্কায় চট্টগ্রামে পাহাড় থেকে সরানো হচ্ছে লোকজনকে

Also Read: মোখা: নিরাপদ আশ্রয়ে চট্টগ্রামের জেলেপল্লীর ৩ হাজার বাসিন্দা

Also Read: চট্টগ্রামে সিত্রাং: জোয়ারে ভেসেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের, বসতঘর

Also Read: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সকাল থেকে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ

Also Read: সিত্রাংয়ের স্মৃতি মাথায় রেখে মোখার আগে প্রস্তুতি চট্টগ্রামে

Also Read: ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে পাঁচ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা

Also Read: ঝড়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দরে বন্ধ হল সব কাজ