ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে পাঁচ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা

বৃষ্টিপাত ৮৯ মিলিমিটারে উঠলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 06:04 AM
Updated : 13 May 2023, 06:04 AM

প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে তিন বিভাগে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে, যার ফলে পাঁচ জেলায় হতে পারে ভূমিধস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবার সকাল ১০টার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল এই তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

সাধারণত, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ভারি এবং ৮৯ মিলিমিটার বা তার চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলে তাকে অতি ভারি বর্ষণ বলে।

বৃষ্টিপাত ৮৯ মিলিমিটারে উঠলে তার প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তি আরও বাড়িয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।

এটি এরই মধ্যে চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ শনিবার জানিয়েছে। অর্থাৎ সুপার সাইক্লোনের ঠিক আগের ধাপে পরিণত হয়েছে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়টি।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটারে উঠছে।

ঘূর্ণিঝড়টি ওই সময়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছিল। এর গতিপথ আগের মতোই কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকেই রয়েছে। ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের তীব্রতা নিয়ে রোববার দুপুর নাগাদ ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির সবচেয়ে বেশি প্রভাব কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সেজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধসে ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কাকে বাড়াচ্ছে।

এর আগে ঝড়ের প্রভাবে ও ভারি বর্ষণে ভূমিধস, বন্যার ঝুঁকির কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, “ফ্লাশ ফ্লাড, ল্যান্ডস্লাইড হতে পারে ঝড়ের প্রভাবে ও ভারি বর্ষণে। সেক্ষেত্রে তাদের রি-লোকেট করার প্লান করেছি, যেখানে ভূমিধসের বেশি শঙ্কা থাকে।

“প্রতিটি ক্যাম্পে ১০০ জন করে পুরুষ-নারী সিপিপি ভলান্টিয়ার্স রয়েছে। ৩৩টি ক্যাম্পে ৩৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত। সরকারি-বেসরকারিভাবে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করে কাজ চলবে।”

টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি আবু সুফিয়ান জানান, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা বৈঠক করেছেন।

“এছাড়া সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ভারি বর্ষণ হলে পাহাড়ধসে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাবসতি বিলীনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে থাকাদের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে।”

মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।