চট্টগ্রামে সিত্রাং: জোয়ারে ভেসেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের, বসতঘর

এ জেলায় ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2022, 04:18 PM
Updated : 25 Oct 2022, 04:18 PM

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আর ঘর ভেঙেছে সাগর তীরের বাসিন্দাদের।

জোয়ারে ভেসেছে ফসলের জমি, মাছের ঘের। এমনকি জোয়ারের পানি ঢুকেছে বেশি উচ্চতার ‍উপকূলীয় এলাকার বাড়িঘরেও।

বাঁশখালীর সাধরপুর, খানখানাবাদ; সন্দ্বীপের সারিকাইত, মগধরা, আজিমপুর, মাইটভাঙা ও কালাপানিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে সাগর তীরে বসবাসকারী প্রায় আড়াইশ জেলে পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে এলে সোমবার চট্টগ্রামে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়। সোমবার রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং নগরীর কাট্টলী ও পতেঙ্গা এলাকা থেকে মোট ২০ হাজার মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে জেলে পাড়ার বাসিন্দারা ঝড় শুরু হওয়ায় সোমবার রাত ১০টার পর সাগর তীরের ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে ওঠেন।

ঝড়ের প্রবল বাতাস ও উঁচু জোয়ারে সাগর ঘেষা তাদের বাড়িঘর এবং মাছ ধরার সরঞ্জাম সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলেপাড়ার বাসিন্দা লিটন দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘরে জাল ছিল, বড় জাল। একার পক্ষে বের করা সম্ভব না। আমার ছোট ছেলে আর বউ ছিল ঘরে। তুফান শুরু হলে রাস্তার উপর চলে আসছি। কিন্তু ঘরের কিছু বের করতে পারিনি।”

জেলেপাড়ার আরেক বাসিন্দা রণজিৎ দাস বলেন, “রাতে ১০টার পর এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হইছি। মোবাইল-টাকা কিছু নিয়ে আসতে পারিনি।”

আকমল আলী বেড়িবাঁধের বিসমিল্লাহ ফিশের ব্যবস্থাপক বারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জলদাস পাড়ার বাসিন্দারা বাঁধের বাইরে সাগরের পাড়ে থাকেন। তাদের সব বাড়িঘরই ভেঙে গেছে। এরা মূলত টং জালে মাছ ধরে।

“ভারি জাল ও অন্য সরঞ্জাম ঘর থেকে বের করা খুবই কঠিন। তাদের ঘরে থাকা জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২৫০ ঘর হবে। সবই ভেঙেছে। অন্য সময় জোয়ার এত উঁচু হয় না। আমাদের তিনটি মাছ ধরার বোটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে সাগর পাড়ের শ’খানেক ঘর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাট্টলী, রানী রাসমনি ঘাট, পতেঙ্গাসহ এই পুরো সাগর পাড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাস।

“গতকাল (সোমবার) রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মানুষকে আমরা সরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু নৌকা ও জাল রক্ষার জন্য অনেকে থেকে যান। তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘাটে বাঁধা ৪০টি মাছ ধরার নৌকা উল্টে গেছে।”

সোমবার মধ্যরাতে নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল এলাকায় বাঁধ উপচে পানি বিমানবন্দর সড়কে উঠে পড়ে। পরে জোয়ার শেষে পানি নেমে যায়।

দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা লিটন মহাজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেভাল সড়কের বিপরীতে দুটি পুকুরে আমার মাছের প্রজেক্ট ছিল। জোয়ারের পানি ঢুকে মাছ ভেসে গেছে।”

বাঁশখালীর সাধনপুরে সাঙ্গুর বাঁধ এবং খানখানাবাদের দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে জানিয়ে ইউএনও সাঈদুজ্জামান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেখেরখীল ও চাম্বল এলাকায় জলকদর খালের পাড় ভেঙে পানি ঢুকেছে। সাগর তীরের বেড়িবাঁধ উপচে মাছের ঘের ও ধানের জমি ভেসেছে।

“প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমির আমন এবং ১৫০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। কিছু বাড়িঘরেও লোনা পানি ঢুকেছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলো ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করলে মোট ক্ষয়ক্ষতি জানাতে পারব।”

উপজেলায় ইতিমধ্যে সাড়ে ৫ চন চালসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও সাঈদুজ্জামান।

সন্দ্বীপের ইউএনও সম্রাট খীসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সারিকাইত, মগধরা, আজিমপুর, মাইটভাঙা, কালাপানিয়া এবং পৌরসভায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাটি দিয়ে তা মেরামতের চেষ্টা হচ্ছে।”

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসাবে জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা ৯৪টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭৬০টি বাড়িঘর।

জেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৫৮ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা চাহিদা ঢাকায় পাঠিয়েছি, পেলে ত্রাণ সামগ্রী ও সহায়তা বিতরণ করা হবে।”