স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের শরিকদের কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।”
Published : 12 Dec 2023, 03:55 PM
আওয়ামী লীগের সমর্থনে আর ‘সহজে আর পার হওয়া যাবে না’; জোটের শরিক দলগুলোকে ‘বার্তা’ দিয়ে দিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে।“
১৪ দলের শরিকদের মধ্যে আসন নিয়ে সমঝোতা নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের।
এই ‘বার্তাটা’ অবশ্য কেবল ১৪ দলের জন্য না, জাতীয় পার্টির জন্যও, যারা ২০০৮ সাল থেকে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দুটিতে ছিল আওয়ামী লীগের শরিক, একটিতে জোট না থাকলেও আসন সমঝোতা হয়েছিল দুই পক্ষে।
জোটের অঙ্কে ১৪ দল থেকে এবার কারা
জাতীয় পার্টিকে কোনো আসন ছেড়ে দেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, "সিট ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাদের আসতে হবে।”
১৪ দলের সঙ্গে নির্বাচন জোটবদ্ধ হবে, এটি নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে আগেই। গত ৪ ডিসেম্বর শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সেই বৈঠকের পর বলা হয়েছিল পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করে ১৪ দলের আসনের বিষয়ে জানাবেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু আট দিনেও এ নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি নেতারা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসন সমঝোতা নিয়ে ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টির খবর এসেছে, যদিও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে না।
এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে ১৪ দলের শরিকরা কেবল ছাড় চাইছেন, এমন নয়, তারা চান সেসব আসনে যেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে না লড়েন। তবে আওয়ামী লীগ ‘বলেছে’, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তোলা হবে না।
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন বেশ লাভবান হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থনে এসব সব আসনে তারা জিতে এসেছে, যেখানে নিজের শক্তিতে লড়াই করা ছিল কঠিন।
তবে গত কয়েকটি নির্বাচনে ছাড় দেওয়া আসনে এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী চাইছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তিনটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনে এবার আছেন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী।
জাতীয় পার্টি কি ভোট থেকে সরে যেতে পারে?
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ভোট থেকে সরে যেতে পার বলে প্রধানমন্ত্রীর ধারণা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন এসেছে, সেটি নিয়েও জবাব দেন কাদের।
তিনি বলেন, “এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়। কেবিনেট শেষে উনি কথা বলেছেন। এটা আমরা এখনো নিশ্চিত না। এটা সব কাগজেরও নিউজ না।
“আজও জাতীয় পার্টি নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।”
সিট ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়নি: কাদের
জাতীয় পার্টিকে ‘ছাড়’: ধোঁয়াশায় রাখল আওয়ামী লীগ
আসন সমঝোতা ছাড়া জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার কী মানে, এই প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেছি; কীভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে, অবাধ হবে, নিরপেক্ষ হবে।
“নির্বাচনটা যাতে সুন্দরভাবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়। যেহেতু তারা অংশগ্রহণ করেছে, সেজন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, সমন্বয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই।”
প্রধানমন্ত্রী-রওশনের মধ্যে কী কথা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদের বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা। তাদের দলীয় অভ্যন্তরীণ যে সংকট, সেটার সঙ্গে আমাদের কিছু নেই।”
জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রওশনের ‘নালিশ’
জিএম কাদের ও চুন্নুকে দায় দিয়ে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা রওশনের
তিনি বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে সংসদীয় দলের নেতা তিনি আলাপ করতেই পারেন। তিনি তো ইলেকশন বয়কট করেছেন। তবে তিনি ইন্টারেকশন করতে পারেন। এ নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা নেই।”
আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে থাকবেন
বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট বর্জনের মধ্যে এবার আসনে আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে থাকতে পারবে- এটিই দলের এখন পর্যন্ত নীতি। নেতাদের বিশ্বাস, শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, কেন্দ্রে ভোটার আসবে আর ‘ভোটার এলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’, এ কথা বারবার বলেছেন তারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। বলপূর্বক বা ফ্রি স্টাইলের কোনো নির্বাচনের ভূমিকা কেউ নেবে না।
“প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক যাকে বলে, যেটা গণতন্ত্রেরই বিষয়। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা করতে পারবে, সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শরিকদের কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।”
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন প্রশ্নে সরাসরি জবাব না দিয়ে কাদের বলেন, “ইলেকশনে বিনা প্রতিযোগিতায় কারও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী যেই হোক তার সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।”
নৌকার ও আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বাদানুবাদ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কাউকে সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না। সে আওয়ামী লীগ হোক, স্বতন্ত্র হোক, গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না, সে সুযোগ নাই।’
নেতাদের স্বতন্ত্র ‘দাঁড় করানো’ গঠনতন্ত্র বিরোধী কি না, এ প্রশ্নে কাদের বলেন, “আগেরটা আগে, আজকেরটা আজকে। আগামীকালেরটা আগামীকাল। পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে আমরা মূল্যায়ন করি। এটাই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা।”
‘সহিংসতা করে ভোট বানচাল সম্ভব নয়’
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “সহিংসতা করে সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না। তারা যদি মনে করে সহিংসতা করবে আর সরকার বসে থাকবে, তা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
“আমরা নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচনের বিপক্ষে যে কোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানাই।”
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার বিপক্ষে। বাংলাদেশে সংবিধানে নির্বাচনে তাদের কী ভূমিকা, তা লিপিবদ্ধ আছে। নির্বাচন কমিশন যখন যেখানে প্রয়োজন দায়িত্ব প্রদানের অনুরোধ করবে। এই বিষয়ে আমরা আর বলতে চাই না।”
বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে?
এই প্রশ্নে চাইলে কাদের বলেন, “নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার জন্য ইতিমধ্যে অনেকে বলেছেন। ইউরোপের ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তারা থাকবে।
“ভারত, জাপান, ফিলিস্তিন, ওআইসি, আরব লিগ পর্যবেক্ষক পাঠাবে। পর্যবেক্ষকদের তালিকা আরও আছে সেটা শিগগিরই জানা যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী।
আরও পড়ুন:
আসন ভাগাভাগি: ১৪ দলে অপেক্ষা বাড়ল