আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা। জাতীয় পার্টির নেতারা ফোনই ধরেননি।
Published : 06 Dec 2023, 11:16 PM
জোটে না থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অঙ্কটি কী হবে, তা স্পষ্ট হলো না দুই দলের বৈঠকে।
২০১৪ সালের মতোই বিএনপির বর্জনের এই ভোটে সংসদে বিরোধী দলটি নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটের বাইরে গিয়ে।
দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অঙ্ক কী হবে, সেই আলোচনার মধ্যে বুধবার রাতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জেষ্ঠ্য নেতাদের সঙ্গে।
বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় এ বৈঠক হয়। সেখানে আসন সমঝোতা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নেতারা কিছু বলতে চাননি। আর জাতীয় পার্টির নেতারা ফোনই ধরেননি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও আরও কয়েকজন।
বৈঠক থেকে বের হয়ে নানক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কীভাবে শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
“তারা তাদের প্রার্থী দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রার্থী দিয়েছি। আমরা আমাদের নির্বাচন করব। সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা চাই।”
২০০৮ সাল থেকেই আওয়ামী ও লীগ ও জাতীয় পার্টি জোট বা সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন ছিল জোটবদ্ধ। আর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ভোট বর্জন করে, সে সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় পার্টিতে ছিল বিভক্তি।
দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও সেই নির্বাচনে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা ভোটে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ছিলেন অনড়।
সেবার জাতীয় পার্টির আগ্রহ অনুযায়ী ৩৪ আসনে ছিল না নৌকার কেউ। লাঙ্গলের প্রার্থীরা জয় পান সেসব আসনেই। ভোট শেষে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ।
পরের নির্বাচনে দুই দল অংশ নেয় মহাজোট করেই। তবে ভোট শেষে জোট ভেঙে দেওয়া হয়, জাতীয় পার্টি যায় বিরোধী দলে। আবার বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন।
এবার বিএনপির বর্জনের এই ভোটে জাতীয় পার্টির নেতারা আসন সমঝোতা নিয়ে কোনো আলোচনায় আগ্রহ না থাকার কথা বলে আসছিলেন। তারা ভোটে আসার সিদ্ধান্ত জানাতেও সময় নিয়েছেন।
আবার রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এই ক্ষোভে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন ভোটে না আসার ঘোষণা দিয়েছেন, যিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত এক দশক ধরে।
রওশন অনুসারীদের বাদ দিয়ে জি এম কাদেরের দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্যে এবার আসন সমঝোতা কী হয়, তা নিয়ে আছে আলোচনা।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জাতীয় পার্টি জিতেছে, এমন আসনগুলোতে এখন পর্যন্ত নৌকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে।
১৪ দলের শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে জটিলতা অবশ্য নেই। দুই পক্ষই জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। আসন সমঝোতার প্রশ্নে গণভবনে শরিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোন কোন আসন তাদেরকে ছাড় দেওয়া যায়, সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে।
আগামী ১৭ ডিসেম্বরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত সমঝোতার এই সুযোগ আছে।
এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে এই আলোচনা নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় বৈঠক হয়েছে।
“বৈঠকে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।”
আসন সমঝোতার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দাবি কী, সে প্রশ্নে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।"
দুদিন আগে পর্যন্তও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এককভাবে নির্বাচনের কথা বলে আসা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বার্তা এসেছে, এমনটি হলে তারা স্বাগত জানাবে।
বারবার একা নির্বাচন করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা মাশরুর মওলাকে কল করা হলে তিনি বারবার তা কেটে দেন।
আরও পড়ুন:
গৃহবিবাদ নিয়েই ভোটে জাতীয় পার্টি
জিএম কাদের ও চুন্নুকে দায় দিয়ে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা রওশনের