তিনি বলেন, “সত্যিকারের অপজিশন হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করানোর এটা মোক্ষম সুযোগ। তারা (জাতীয় পার্টি) নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাই।”
Published : 03 Dec 2023, 03:50 PM
পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতা হলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, “জাতীয় পাটির আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা পাইনি। তারা যদি নিজেদের শক্তির উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করেন, এ মুহূর্তে এটাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর।”
২০০৮ সাল থেকে সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোট করেই অংশ নেয়।
২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা হয় দুই দলে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ, এসব আসনেই জিতে আসেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা।
এই সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রওশন এরশাদের, যিনি ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়ে জোরাল ভূমিকা নেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলনের মুখে জাতীয় পার্টির দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একেবারে শেষ মুহূর্তে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু রওশন বলেন, তিনি ভোটে যাবেন, তার অনুসারীরাও উঠবেন না।
ভোট শেষে রওশন এরশাদকে সংসদীয় দলের নেতা বানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা, তিনি হন বিরোধীদলীয় নেতা। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরও একই পদে থাকেন রওশন।
তবে ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের লড়াইয়ে এরশাদের ভাই জি এম কাদেরের কাছে দৃশ্যত পরাভূত রওশন। এবার দলের মনোনয়নে তার অনুসারীদের প্রায় সবাই বাদ পড়ে গেছেন।
এবার তার অনুসারী মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে রংপুর-১, ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের রংপুর-৩, জিয়াউল হক মৃধার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, রুস্তম আলী ফরাজীর পিরোজপুর-৩ আসনে তাদেরকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এগুলোসহ আরও কিছু আসন না পেয়ে নিজেও ময়মনসিংহ-৪ আসনে দাঁড়াচ্ছেন না রওশন।
আরও পড়ুন:
গৃহবিবাদ নিয়েই ভোটে জাতীয় পার্টি
জিএম কাদের ও চুন্নুকে দায় দিয়ে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা রওশনের
রওশনের ‘সম্মানের আসন’ মুসাকে দিল জাতীয় পার্টি
এবার ভোটে আসার শর্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিজের মতো চালানোর শর্ত দিয়েছেন জি এম কাদের বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর। যদিও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য আসেনি। রওশন ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে নেতারা বলছেন।
তিনটি নির্বাচনে ছাড় দিলেও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসনে এবার আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরুল ইসলাম খানকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে অবলীলায় জিতে আসা ফখরুল ইমামের ময়মনসিংহ-৮ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এভাবে ২৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২২ জনকেই চাপে রেখেছে আওয়ামী লীগ। কেবল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চিন্তা করছে না। বিএনপির বর্জনের কারণে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট তাদের বাক্সে পড়বে বলেই বিশ্বাস সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সত্যিকারের অপজিশন হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করানোর এটা মোক্ষম সুযোগ। তারা নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাই।”
আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
কাদের বলেন, “১৪ দলের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের জোট, তাদের সঙ্গে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। সেই জোটকে বাইরে রেখে নির্বাচন করব সেই কথা আমরা ভাবিনি।
“যারা জিতে আসতে পারবেন, আগেও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, এ রকম গ্রহণযোগ্য নেতা অবশ্যই বাদ পড়বেন না।”
তবে আগের তিন নির্বাচনে শরিকদেরকে যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দেন তিনি। বলেন, “এখানে অ্যাটজাস্টমেন্টের ব্যাপার আছে। এসব বিষয়গুলো ভেবে দেখা দরকার। মানুষ চায় না, এমন কোনো নাম জোট থেকে আমরা সমর্থন করতে পারব না।”
আওয়ামী লীগের ফাঁকা রাখা আসনে জাপার প্রার্থী সেলিম ওসমান
মেননের আসনে নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দিন নাছিম
বিএনপির ‘বর্জনের ভোটে’ স্বতন্ত্র ও দলছুটদের ভিড়