“সিট ভাগাভাগির বিষয়টা আমি জানি না। সিট ভাগাভাগি হয়েছে এমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করেছি”, বলেন তিনি।
Published : 07 Dec 2023, 03:45 PM
আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হলেও নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতই বিএনপির বর্জনের এই ভোটে সংসদে বিরোধী দলটি নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটের বাইরে গিয়ে। এবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অঙ্ক কী হবে, সেই আলোচনার মধ্যে বুধবার রাতে দুই দলের নেতারা বৈঠক করেন।
সেই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা করেছি, সেটার মূল বিষয় ছিল নির্বাচনকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করার জন্য। যারা নির্বাচনমুখী শক্তি, এদেরকে নিয়ে আমরা সমন্বিতভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে, গুপ্তহত্যা, নাশকতা ও নির্বাচনবিরোধী অপকর্মকে প্রতিহত করব। এটাই আমাদের আসল আলাপ-আলোচনা মূল বিষয় ছিল।”
জাতীয় পার্টির দল হিসেবে অনেক কথাই বলতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলের হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করা, এটা তো তারা চাইবে। বাস্তবে কী হবে, সেটা পরে দেখা যাবে।
“চাইতে তো কোনো দোষ নেই, আশাটা বড় থাকাই ভালো। সিট ভাগাভাগির বিষয়টা আমি জানি না। সিট ভাগাভাগি হয়েছে এমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করেছি।”
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপে ‘এত লুকোচুরি কেন’- এমন প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী বলেন, “লুকোচুরির বিষয় না। এটা নিয়ে এত ঢাক-ঢোল পেটোনোর কী আছে? নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। কারণ, নির্বাচনবিরোধী শক্তির যে অপরাজনীতি করছে, সেটা মোকাবিলার জন্য আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার।
“নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করা, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা, নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। এজন্য আমরা আলাপ আলোচনা করছি। এখানে লুকোচুরির কোনো ব্যাপার না। আমরা পলিটিক্যাল বিষয়ে কথা বলেছি৷”
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও ক্ষমতাসীন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ ধরে নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে চললেও এখনও অনড় অবস্থানে বিএনপি। দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে তারা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন বানচালের জন্য ওরা ততই মরিয়া হয়ে উঠছে। মরণ কামড় দিচ্ছে। সে কারণেই আজকে নির্বাচনমুখী যে রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সাথে আমাদের আগে জোট ছিল, মহাজোট ছিল, তাদের সাথে আমরা আমাদের সহযোগিতা, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার তাগিদ আমরা অনুভব করছি। আমরা ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছি, জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনা করেছি।”
২০০৮ সাল থেকেই আওয়ামী ও লীগ ও জাতীয় পার্টি জোট বা সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন ছিল জোটবদ্ধ। আর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ভোট বর্জন করে, সে সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় পার্টিতে ছিল বিভক্তি।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জাতীয় পার্টি জিতেছে, এমন আসনগুলোতে পর্যন্ত এবার নৌকার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৪ দলের শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে জটিলতা অবশ্য নেই। দুই পক্ষই জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। আসন সমঝোতার প্রশ্নে গণভবনে শরিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোন কোন আসন তাদেরকে ছাড় দেওয়া যায়, সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে।
দেশের বাইরে বিদেশেও সরকারের বন্ধু আছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিদেশে আমরাও বন্ধুহীন নই, আমাদেরও বন্ধু আছে। আমাদের বন্ধুরাও বাংলাদেশের খোঁজখবর রাখে। তারাও জানেন, সাংবিধান রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচন করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের পথে হাঁটছেন। দেশটা যেন আবদ্ধে ডুবে না যায়।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-